`

মাননীয় ভিসি মহোদয় আমরা লজ্জিত জাতি লজ্জিত, আপনি চলে যান.......

  • Views: 7086
  • Share:
জানুয়ারী ২৫, ২০২২ ১৮:০৩ Asia/Dhaka

মো. ইয়াহইয়া:: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক অনাখাঙ্খিত ঘটনাবলী, ঘটনার নেপথ্য কাহিনী ও শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন ওসব এখন দেশের সবারই জানা। একজন সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে আমি প্রতিটা ঘটনা গভীর বেদনা নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছি। এবং একজন শিক্ষক হিসাবেও আমি লজ্জাবনত মস্তকে ভাবছি একজন ভিসি কতটা নিলর্জ্জ হলে এভাবে তার পদটা তিনি আকড়ে ধরতে পারেন। প্রথম দিকে শুধু শিক্ষার্থীরাই খোলা আকাশের নীচে অনশন চালিয়ে গেলেও এখন তিনিও বিদ্যাুৎহীন, খাবারহীন অবস্থায় আছেন। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে তিনিও আমৃতু চেষ্টা চালিয়ে যাবেন গদি আকড়ে রাখার। ছিঃ।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক আন্দোলনটা ছিল মূলত ছাত্রীদের। হল প্রভোস্ট এর বিরুদ্ধে তাদের ছিল নানান অভিযোগ। তাই তারা প্রভোস্টের পদত্যাগ চাচ্ছিল। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে মূল উদ্দেশ্য ছিল হলের প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। তাদের কিছু দাবী দাওয়া আদায় করার। কিছু অভাব-অভিযোগের সুরাহা করার। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এধরনের দাবী দাওয়া আসাটাই স্বাভাবিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অভিভাবক হিসাবে উপাচার্য মহোদয় গুরুত্ব নিয়ে তাদের দাবী দাওয়া দেখবেন, সমাধানের রাস্তা খুজবেন।
 
আমরা দেখলাম সমস্যা সমাধানের ধারপ্রান্তে এসে........পুলিশের নির্দয় পিটুনী অতঃপর মামলা সবই গুড়ে বালি। এখন পক্ষ দুটি। ভিসি পক্ষ বনাম শিক্ষার্থী পক্ষ! এতদিন শিক্ষার্থীরা না খেয়ে হাড় কাপানো শীতের মধ্যে ছিল। আর এখন ভিসি মহোদয়ও বিদ্যুঃহীন খাবারহীন অবস্থায় আছেন। দুপক্ষ তাহলে সমানে সমান! কিন্তু কেন??? ভিসি- শিক্ষার্থী দুপক্ষ হতে পারে না। এভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না। ভিসি পদটি সবোর্চ্চ সম্মাণিত। তিনি শিক্ষার্থীদের অভিভাবক। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হল তিনি শিক্ষার্থীদের অভিভাবক নন।  তিনি শাসক, নির্মম শাসক। কিন্তু কেন?বিশ্ববিদ্যালয়ে তো কোনো শাসক থাকতে পারে না, অভিভাবক থাকতে হয়। 

কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের সাথে আমরা লক্ষ্য করলাম, শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের শান্তিপূর্ণ কোন পথ গ্রহণ না করেই ভিসি মহোদয় তার ক্ষমতার চরম দম্ভ দেখালেন। পুলিশ এবং অন্যান্য বিশেষায়িত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ডেকে আনলেন। শিক্ষার্থীদের উপর বুলেট ছুড়লেন, সাউন্ড গ্রেনেড মারলেন, লাঠিচার্জ করলেন, নাম-না-জানা শত শত ছাত্রছাত্রীর উপর মামলা করালেন। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক! না হতে পারেন না। 

একজন শিক্ষকের কারণে আজ আমাদের প্রিয় শিক্ষাঙ্গন, প্রিয় জুনিয়র স্কলারদের জীবন সংকটাপন্ন। এ অবস্থা চলতে পারে না। শিক্ষার্থীদের জীবনের চেয়ে শিক্ষাঙ্গনে কোনো পদই বড়ো হতে পারেনা। তাই বিবেকের তাড়নায় বলি মাননীয় ভিসি মহোদয় আমরা লজ্জিত জাতি লজ্জিত, আপনি চলে যান। আপনি শিক্ষক, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অভিভাবক। আপনার এপদটা আর আকড়ে রাখার চেষ্টা করাটা একেবারে বেমানান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কিন্তু এখন আর একা নয়। প্রথমদিকে ভিসি অনুগত গুটি কয়েক ছাত্রলীগ কর্মীরা শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নিলেও এখন সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীসহ দেশের আমজনতা, সুশীল সমাজ সবাই কিন্তু শিক্ষার্থীদের পক্ষে আছে। 

সরকারের নিয়োগ দেওয়া ভাইস চ্যান্সেলরকে প্রত্যাহার করা সরকারের জন্য অপমানজনক একটা ব্যাপার, তাই হয়তো শিক্ষামন্ত্রী খুব সুন্দর করে গুছিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে সরে আনতে চেয়েছিলেন, ভিসিকে স্বপদে রাখার কৌশল এঁটেছিলেন। কিন্তু ব্যাপারটা এখন অনেক দূর গড়িয়েছে, এখন আর সম্ভব নয়। এখন সমাধানের রাস্তা একটাই, আর তা হল ভিসি মহোদয়কে ছুটি নিয়ে তার সাবেক জায়গায় স্বসম্মাণে ফিরে যাওয়া। আর তা না হলে আপনা সন্তানতুল্য ছাত্র-ছাত্রীরা অনির্দিষ্টকাল হাঁড় কাপানো শীতে অনশন করে খোলা রাস্তায় শুয়ে থাকতে থাকতে প্রাণহানিসহ সমুহ ক্ষতি হতে পারে তা কারোই কাম্য নয়। 

মাননীয় ভিসি মহোদয় ক্ষমা করবেন। ঘটনার ঢালপালা কিন্তু ছড়িয়েছেন আপনিই। হয়তো আপনি আপনার ক্ষমতার দাম্ভিকতা দেখাতে গিয়ে নয়তো বা সমস্যা সমাধানে অদক্ষতার পরিচয় দিয়ে। প্লিজ আপনি চলে যান। আমাদের প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়কে আপনি আর কলুষিত করবেন না। দেশে কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে সরকারকেও বেকায়দায় ফেলবেন না। 

লেখক
 সাবেক শিক্ষার্থী
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদক, জালালাবাদ ২৪.কম, দ্য বিডি ক্যাম্পাস

user
user
Ad
Ad