`

পাঠ্যক্রমে পরীক্ষা পদ্ধতি ফেরাতে পথ খুঁজছে সরকার

  • Views: 851
  • Share:
ফেব্রুয়ারী ৮, ২০২৪ ১২:৫৫ Asia/Dhaka

জালালাবাদ ডেস্ক:: নতুন কারিকুলামে পাঠ্যক্রমে পরীক্ষা না থাকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে অভিভাবক মহলে। দাবি উঠেছে, পুরো কারিকুলাম বাতিলের। পরীক্ষা পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলনেও নামেন অভিভাবকরা। তাদের দাবি মেনে নিয়ে পরীক্ষা পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার।

ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে মূল্যায়ন পদ্ধতি ও কারিকুলাম সংক্রান্ত একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের জন্য বানানো ‘নৈপুণ্য’ অ্যাপেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। তবে পরীক্ষা পূর্ণ নম্বরে হবে নাকি আংশিক নম্বরে হবে সেটি কমিটির সুপারিশের পর চূড়ান্ত হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত ১ জানুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী (তখন পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রী) জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং শিক্ষা কারিকুলামের সঙ্গে যুক্ত সংস্থা ও ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। দিনব্যাপী এই বৈঠকে মূল্যায়নের জন্য বানানো ‘নৈপুণ্য অ্যাপ’ এবং নতুন কারিকুলামে কোন কোন দেশ থেকে রেফারেন্স নেওয়া হয়েছে তার বিস্তারিত জানতে চান। এনসিটিবি থেকে সেসব তথ্য সরবরাহ করার পর গত বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) কারিকুলাম এবং পাঠ্যপুস্তক বিতরণ ও মানোন্নয়ন সংক্রান্ত পর্যালোচনা সভা করে নতুন কমিটি গঠন করে দেন তিনি। কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে পর্যালোচনার প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটির সুপারিশ পাওয়ার পর চলতি বছরেই তা বাস্তবায়ন করা হবে।

কারিকুলাম পর্যালোচনার জন্য কমিটি গঠন করেছে- এটাকে প্রাথমিক বিজয় মনে করি। একই সঙ্গে কমিটি যেন অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মতামত নিয়েই প্রতিবেদন দেয় সেই দাবি থাকবে। কত নম্বরের পরীক্ষা থাকবে সেটা তারা পর্যালোচনা করে নির্ধারণ করুক। তবে শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে রাখার জন্য পরীক্ষা যেন থাকে সেই দাবি জানাচ্ছি
সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনে’র আহ্বায়ক রাখাল রাহা

জানা গেছে, দুই বছরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ৭টি শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম বা শিক্ষাক্রম চালু করেছে সরকার। ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণি, ২০২৬ সালে একাদশ শ্রেণি এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে ধাপে ধাপে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়ার কথা রয়েছে।

নতুন কারিকুলামে সব শ্রেণিতে পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করে মূল্যায়নের নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। নবম শ্রেণিতে বিভাগ পছন্দের বদলে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা পছন্দমতো বিভাগে পড়তে পারবে। হঠাৎ করে এসব পরিবর্তনের ফলে অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন মহল সংক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, নতুন কারিকুলামে পুরোপুরি পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি তাদের দাবি পাশ কাটিয়ে কারিকুলাম বহাল রাখতে চান। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর দীপু মনিকে শিক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেয় সরকার। নতুন শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান মহিবুল হাসান চৌধুরী। দায়িত্ব নিয়েই শিক্ষামন্ত্রী নতুন কারিকুলাম নিয়ে চলমান বিতর্ক নিয়ে কথা বলেন।

তিনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে নানা মহল থেকে কিছু পরামর্শ আসছে। এগুলো আমলে নিয়েই কারিকুলাম ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসতে পারে। কারণ কারিকুলাম যে একেবারে শতভাগ স্থায়ী তা কিন্তু নয়।

জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ফরহাদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী নতুন কারিকুলামের বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছেন। এর মধ্যে নৈপুণ্য অ্যাপসে কীভাবে মূল্যায়ন হয়, নতুন কারিকুলাম তৈরিতে যেসব দেশ থেকে রেফারেন্স নেওয়া হয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য চেয়েছেন। আমরা এসব তথ্য সরবরাহ করেছি।

পরীক্ষা পদ্ধতিতে ফিরবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, একেবারে বাতিল না করে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা রাখার দাবি উঠেছে সব মহল থেকে। এসব বিষয় পর্যালোচনা করতেই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সুপারিশ পাওয়ার পর বলা যাবে আসলে কী হচ্ছে।

এনসিটিবি বলছে, নতুন শিক্ষাক্রমে যদি কোন পরিবর্তন, সংশোধন বা পরিমার্জন আসে তা বছরের যেকোনো সময় বাস্তবায়ন করা সম্ভব। কারণ কোনো বই-ই এখনো পূর্ণাঙ্গ নয়। সবই পরীক্ষামূলক সংস্করণ। গত বছরের এপ্রিল মাসে ৬ষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দুটি বইয়ের চার শতাধিক সংশোধনী পাঠায় বোর্ড।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ২০২৩ সালে ৬ষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি কারিকুলাম চালুর পর নানা সমালোচনার ঝড় ওঠে। নানা ভুল আর অসংগতির কারণে ২০২৪ সালে ৮ম ও নবম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম চালু না করার পরামর্শ দেন এনসিটিবি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কিন্তু সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি অনেকটা জোর করেই দ্বিতীয়, তৃতীয়, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম চালু করেন। নতুন কারিকুলামের লেখক নির্বাচন থেকে শুরু করে সবকিছু মন্ত্রী নিজে দেখেন। পুরো পাণ্ডুলিপি তিনি বাসায় রেখে দেখেন। এজন্য পাণ্ডুলিপি নির্দিষ্ট সময়ে ছাপাখানাসহ সংশ্লিষ্টদের হাতে পৌঁছায়নি। ফলশ্রুতিতে চলতি বছর ৮ম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে দেরিতে বই পৌঁছায়।

user
user
Ad
Ad