`

প্রসঙ্গ ৫ই অক্টোবরের প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

  • Views: 822
  • Share:
অক্টোবার ৬, ২০২৩ ২০:৩২ Asia/Dhaka

মো. আব্দুদ দাইয়ান:: ইউনেস্কো কর্তৃক ১৯৯৪ সাল থেকে বিশ্বশিক্ষক দিবস পালিত হয়ে আসছে সারা বিশ্বে। এ বার বাংলাদেশে ও তা রাষ্ট্রীয় ভাবে পালিত হল, আসলে এ দিবসের মত বিশ্বে আরও অনেক দিবস পালিত হয় ।

এতে র‍্যালী, অলোচনা সভা, দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে আলোচনা হয় এটাই নিয়ম, তাই বিশ্ব শিক্ষক দিবস ঘোষিত হওয়ার পর আমার ধারনা ছিলো  এটাই হবে মনে করেছিলাম কিন্তু আমাদের শিক্ষক ভাইয়েরা সোসাল মিডিয়ায়  একে চরম পাওয়া মনে করে বিভিন্ন  কমেন্ট  লিখা শুরু করলেন এবং সদ্য আন্দোলন রত শিক্ষক নেতারা এটা আদায় করা তাদের কৃতিত্ব বলে দাবী করলেন, আরও বললেন ঐ দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিক্ষক সভা হবে এবং প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থেকে বেসরকারি শিক্ষকদের  সব দাবি দাওয়া বিষয়ে ঘোষণা দিবেন, আমরা যারা সাধারণ শিক্ষক উনাদের কথায় আশাবাদী হলাম এবং আমরা গ্রাম থেকে ও ঐ দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম, এ দিকে আনদোলন রত শিক্ষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ কবির বিন আনোয়ার স্যার এর আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আন্দোলন প্রত্যহার করলেন এবং নেতৃবৃন্দ দেশের প্রায় জেলায় গিয়ে তাঁদের আন্দোলনের সফলতা কথা ঘোষণা দিয়ে বিটিএ কে সংগঠিত করতে লাগলেন এদিকে নতুন যোগ দেয়া শিক্ষকগন অতি উৎসাহী হয়ে সোসাল মিডিয়ায় প্রাপ্তির বিষয়ে আশাবাদী হয়ে যা, তা লিখতে লাগলেন কিছু কমেন্ট পড়ে মনে মনে চিন্তা করলাম,  একটি দিবস অন্যান্য দিবসের মত পালিত  হবে আর শিক্ষকরা প্রাপ্তির বিষয়ে নেতৃবৃন্দের কাছ যে আশা পেয়ে  বিভিন্ন ধরনের আশবাদী কমেন্ট লিখে যাচ্ছেন  তা নিয়ে আমার সংসয় থাকলো ও তা প্রকাশ করিনি এ কারণে যদি তাঁদের কথামত ঐদিন সভায় দাবী আদয়  হয়ে যায়। অপেক্ষা করলাম গত কাল ৫ তারিখ চলে গেছে যা হবার তা হয়ে গেল অর্থাৎ সরকার অন্যান্য দিবসের মত পালন করলেন দিবসটি। আর শিক্ষক ভাইয়েরা আবার হতাস হয়ে  কিছু কিছু শব্দ ব্যবহার শুরু করেন যা দেখে হাসি পায় এতে  সাধারণ মানুষ বিরূপ মন্তব্য করে। তা হলে শিক্ষক ভাইদেরকে বলব আপনারা বুঝলেন না যে বাংলাদেশের প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সবার জন্য এ দিনটি  শুধু বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য নয়। 

এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষকরা বুঝাতে চেষ্টা করলেন এ বারের মত এত বড় শিক্ষক আন্দোলন আর কোন দিন হয় নাই এবং এবারে যারা নেতৃত্ব দিলেন তারাই এ পর্যন্ত সবচেয়ে নামীদামী শিক্ষক নেতৃবৃন্দ। 

কিন্তু আমরা ত দেখেছি অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান স্যার, অধ্যক্ষ হেনা দাস,শেখ আমানুল্লাহ, জয়নুল আবেদীন চৌধুরী, নজরুল ইসলাম (রাজশাহী), অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম,জনাব আব্দুন নূর চৌধুরী, অধ্যক্ষ আব্দুল আউয়াল এর  মত নেতৃবৃন্দ কে যারা বেসরকারি শিক্ষক দের দাবীদাওয়া আদায় করে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। 

আর আন্দোলন ১৯৭৩ এর পর ১৯৮৫ সনে সবচেয়ে দীর্ঘ আন্দোলন হয়েছিল নেতৃবৃন্দ জেলে ও গিয়েছিলেন  পরে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী এর মধ্যস্থতায় আন্দোলন প্রত্যাহার হয় এবং শিক্ষকদেরকে  এমপিও এর মাধ্যমে বেতন সরকার দিতে সম্মত হয়। পরে আরও তিনবার বিএনপির আমলে ২ বার এবং আওয়ামীলীগের আমলে ১ বার শিক্ষকরা আন্দোলন করে প্রতিবারই কিছু না কিছু আদায় করে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ আন্দোলন প্রত্যাহার করেছিলেন এবং  ঢাকাতে আমিও ৩ বার গিয়েছিলাম। তৎকালীন সময়ে সরকার কতৃক  প্রতিনিধি সভায় এসে দাবী মানায় আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়। এবং তখনও শিক্ষক সমিতি বহুধা বিভক্ত ছিলো কিন্ত তখন নেতৃবৃন্দ লিয়াজো কমিটির মাধ্যমে আলাদা আলাদা ভাবে আন্দোলন যার যার অবস্থান থেকে শুরু  করেছিলেন বলেই, তারা সফল হয়েছিলেন। এর পরবর্তীতে অনেক দিন আন্দোলন না হলেও বিভিন্ন বিবৃতি, মানব বন্ধন এর মাধ্যমে বৈশাখী ভাতা ও  ইনক্রিমেন্টের দাবি অব্যাহত থাকে যার  ফলশ্রুতিতে বৈশাখী ভাতা  ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের জন্য আন্দোলন ছাড়া বার্ষিক বৃদ্ধি প্রদান করেন এ সফলতা ও কিন্তু সমিতির নেতৃবৃন্দের। ব্যতিক্রম শুধু এ বছর লিয়াজো করা হয়েছিলো কিনা জানিনা হঠাৎ শিক্ষকদেরকে ঢাকায় বিদ্যালয় বন্ধ করে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হলো, প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ শিক্ষক নাকি জাতীয় প্রেসক্লাবে জড়ো হয়েছিল, আমিও ঢাকায় গিয়েছিলাম শিক্ষকদের উপস্তিতি দেখতে ও সং হতি প্রকাশ করতে এটা ছিলো আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত,বিটিএ নেতৃবৃন্ন্দের ধরনা ছিলো শিক্ষকদের এ উপস্থিতি দেখে  সরকার দাবি মেনে নিবে, শিক্ষকরা  কষ্ট করলো তা হলে কেন আগের আন্দোলন গুলোর মত দাবী আদায় না করে আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হল। আজকে থেকে নেতৃবৃন্দের ও অনেক শিক্ষক ভাইদের বলতে শুনি অন্যান্য সংগঠন না যাওয়ায়  আন্দোলন সফল হয়নি কিন্তু ভাইয়েরা বুঝা উচিৎ যারা আন্দোলনে যায় নাই তাদের কে দোষ দিয়ে লাভ নেই যারা আন্দোলন সংগঠিত করেছেন এর দায় দায়িত্ব উনাদের। 

পরিশেষে আমার লিখার উদ্দেশ্য হলো আমরা যেহেতু বহুধা বিভক্ত, আমারা শিক্ষক কারন আমরা অন্যান্য পেশার মত দাবী আদায়ে কথায় কথায় রাস্তায় নামা সম্ভব নয়। আবার কথায় কথায় স্কুল বন্ধ করাও সঠিক কিনা তাও বিবেচনায় রাখতে হবে। তাই আন্দোলনে যাওয়ার আগে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে  হবে। তবে আন্দোলনের বিকল্প নেই, আন্দোলনের মাধ্যমেই অতীতের নেতৃবৃন্দ আমাদেরকে এ অবস্থায় নিয়ে এসেছেন আমরাও তাদের পথ অনুসরণ করে চাকুরী জাতীয়করন সহ সব সমস্যা সমাধানে চেষ্টা চালাতে হবে। আমি কেন্দ্রীয়  সব নেতৃবৃন্দকে শ্রদ্ধা জানাই কারন আমাদের আজকের এ অবস্থান তাঁদের জন্য। 

সবশেষে আমার আহবান আমাদের সময় শেষ প্রান্তে আপনারা হতাশ হবেন না আবার অনুরোধ কেন্দ্রীয় নেতৃকে অসম্মান করবেন না মনের জোর রাখবেন আপনারা সফল হবেন এবং আপনাদের সময়ে চাকুরী জাতীয়করন হবেই।

শুক্রবার, সকাল 
০৬/১০/২০২৩

মো. আব্দুদ দাইয়ান

সাবেক সহকারী সচিব 
শিক্ষক সমিতি সিলেট জেলা।

user
user
Ad
Ad