`

একটি শিশু ও একটি নয়নতারা 

উপ সম্পাদকীয়
  • Views: 574
  • Share:
ডিসেম্বার ১০, ২০২১ ১৭:৪৭ Asia/Dhaka

রুহুল আলম ::  গতকাল রাত এগারোটার সময় শিবগঞ্জ হয়ে টিলাগড়  নিজ বাসায় ফিরছিলাম। কিছু ঔষধ কিনতে শিবগঞ্জ বাজারে নামলে দেখা হয়ে যায় ছোট্ট শিশু,যে তার নামও বলতে পারেনা। একটি বোতল এবং কিছু ময়লা  হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমার মনে আঘাত লাগলো। এই ছোট্ট শিশুটির মা বাবা কোথায়? আশে পাশে তাকাতেই একজন লোক জানালো যে মা আশেপাশে কোথাও  ভিক্ষা করতেছে, সে এভাবেই থাকে বাজারে। আমি একটু যত্ন করে ডাকতেই  সে আমার কাছে আসলো এবং ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল। আমার চোখে কোনে একটু জল নামল এই জন্য যে ঠিক এই বয়সী আমার একটি মেয়ে আছে। 

কি করব ভাবতে পারছিলাম না? সাধারণত এরকম বাচ্চাদের আমি কোলে  নিয়ে থাকি । সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। কারণ কার বাচ্চা ,কে কি ভাববে, এইসব ভেবে।অনেকক্ষণ তার সাথে কথা বললাম একতরফাভাবে ।সে এত ছোট যে কোন কথার উত্তর দিতে পারল না কিন্তু বিভিন্ন সাউন্ড করে বুঝাইলা যে সে আমাকে পছন্দ করছে। কি করব ভেবে না পেয়ে পাশের দোকান থেকে একটা কেক কিনে দিতেই সে দৌড় দিল মায়ের কাছে সম্ভবত। মা হয়তো  একটু দূরে ভিক্ষা করতেছে।  সে এই বয়সে বুঝে ফেলেছে যে জীবিকা কি জিনিস? হয়তো মাকে খুশি করতে এগুলো নিয়ে দৌড় দিছে। না, হলে তো সেখানে বসে এগুলো খাওয়ার চেষ্টা করত। 

কি আর করা কিছু না করতে পেরে নিজেকে অপরাধী মনে করে আবার মোটরসাইকেল স্টার্ট করে বাসার দিকে রওনা।পথিমধ্যে একবিন্দু ওর কথা ভুলতে  পারি নাই ,এমনকি বাসায় ফিরে আমার বাচ্চাদের সাথে কথা বলছিলাম তখন ও ওর উপস্থিতি ছিল আমার মনের মধ্যে। কি মনে করে যে ওর ছবি তুলেছিলাম জানিনা? কিন্তু যখন আমার বাচ্চাদের সাথে কথা বলছিলাম তখন ওর ছবিটা বারবার দেখছিলাম। কাউকে ছবিটা দেখায়নি বা কারো সাথে এই বিষয়টা নিয়ে আলাপ করে নি। 

সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন বাচ্চাদেরকে নিয়ে আবার উঠোনে খেলতে নামলাম। ঠিক তখনই দেখলাম বাড়ির ওয়ালের কর্নারেরএকটি জায়গায় একটি নয়ন তারা ফুলের গাছ কোন মাটি ছাড়া ওয়ালের মধ্যে  কিভাবে যে বীজ থেকে এই গাছটা উটলো।  স্বাধীনভাবে নিজস্ব ভঙ্গিমায় একটা ফুল ফুটেছে।দেখতে অসাধারণ লাগছিল।কি মনে করে ঠিক আরেকটি ছবি তুললাম ফুল গাছটার । তখনো মনের মধ্যে এই ছবিটার সাথে এই ছবিটার মিল করার চেষ্টা করছিলাম। বার বার দেখছিলাম দুইটা ছবি। অনেক মিল খুঁজে পেলাম। মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন জাগলো অনেক উত্তর খুঁজে পেলাম অনেক উত্তর খুঁজে পেলাম না। 

কি হলো আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি আজ বেঁচে থাকতেন আর এই দৃশ্য দেখতেন অবশ্যই  তিনি কষ্ট পেতেন। সাথে সাথে এদের উদ্দেশ্যে হয়তো কোন প্রজেক্ট নিয়ে নিতেন। বর্তমান সরকার প্রধান বাবার মতো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নে অনেক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আশেপাশে থাকা মুরাদের মত অনুপ্রবেশকারীরা অথবা ত্যাগী  নামের প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতিবিদদের প্রশ্রয়দাতা,যারা সব সময় নিজের আত্মবিশ্বাস নিয়ে  দ্ন্ধ- এ থাকেন ,তাদের কারণে আজও স্বাধীনতার চরম প্রাপ্তি, যাদের প্রাপ্য তাদের কাছে পৌঁছায়নি। ভাবতেও লজ্জা পাই এইসব প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতিবিদ এবং ত্যাগী নামের অন্ধ রাজনীতিবিদদের কথা ভেবে। নিজেও বুঝতেছেনা দেশ কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। সময় হয়েছে এসব ঘাপটি মেরে থাকা রাজনীতিবিদদের প্রতি সোচ্চার হওয়ার। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ তৈরি করার জন্য ভন্ড রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে।

এখন সময় হয়েছে এরকম অসহায় শিশুদের পাশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সামাজিক প্রকল্প নেয়ার। এ দেশে এখনও অনেক মানুষ পড়াশোনা করে। অনেকে দেশ-দুনিয়ার খবর রাখে। তাদের সহযোগিতা নিয়ে এরকম অসহায় শিশুদের জন্য অনেক কিছু করা যায়। সময় হয়েছে মানবিক উন্নয়নের জন্য। রাস্তাঘাট উন্নয়ন আর বিল্ডিং বাণিজ্য বাড়ানোর পাশাপাশি মানবিক উন্নয়ন এখন অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করি।

উপ সম্পাদক 
রুহুল আলম
জালালাবাদ২৪.কম

user
user
Ad
Ad