`
শিক্ষক দিবস উপলক্ষে একটি ডায়ালেক্টিক্যাল পয়েম

"মূলোৎপাটন "

  • Views: 536
  • Share:
অক্টোবার ৯, ২০২১ ২০:৩৫ Asia/Dhaka

স্যার, অনেকদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার আপনার কামরায় এলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই সব বর্ণালী দিনগুলো স্যার কেমন যেন হারিয়ে ফেললাম। তারপর- কেমন আছেন স্যার। এইতো বেশ আছি। বলো তোমরা কেমন আছো খুব ভাল আছি স্যার। ভেরী গুড।

তবে কেমন করে আজ এ অধমকে দেখতে এলে তোমরা ।
স্যার আপনি কিন্তু অনেক বড় কর্মকর্তার গ্রেডে চাকরি করেন।
এ যাবৎ আমরা বহু অফিস আদালতে ঘুরেছি স্যার । তাই কিছু মনে করবেন না স্যার।
আপনার অফিসে কিন্তু সেরকম তেমন কোন জৌলুস বা চাকচিক্য নেই স্যার।
দেখো, বাপু আমিতো কোন সরকারী কর্মকর্তা নই।
আমি কেবল কর্মকর্তা তৈরী করি। একজন মিস্ত্রী বা নির্মাতা মাত্র।
বিল্ডিংয়ে মিস্ত্রীর কি তেমন কোন পরিচয় থাকে।  মিস্ত্রী কেবল বানায়। বিল্ডিংয়ে থাকেন জামালউদ্দিন-কামালউদ্দিন গয়রোগণ (গং)।
স্যার আপনিতো দূর্নীতি ও অপরাধ বিজ্ঞান পড়ান কিন্তু এখনো সেই ক্লাসের মতোই আপনার কথাগুলো রসাত্বক।
নাট্যজনের মতোই আপনার সব ব্যঞ্জনা।
দেখো বাপু তোমরা ভাল ছাত্র ছিলে, নিশ্চয় এখন তোমরা ভাল ঠিকাদারও বটে। আমি কিন্তু ঠিকা দেইও না,ঠিকা নেইও না- আমি সেই আগের মতোই আছি। আমার অফিসে চাকচিক্য নাই থাক।

তোমরা কেন ভালো ভালো ভবন আর স্থাপনা নির্মাণ করছো না বাপুরা।
এই পেপার পত্রিকা খুললেই যা-যা---- দেখতে হয়।
সবাইকে কমিশন দিতে দিতে  এর চেয়ে ভালো স্থাপনা কি করে তৈরী করা যায় স্যার।
স্যার অপরাধ আর দূর্নীতি নিয়েই আপনার পড়াশুনা,আপনার সব গবেষণা।
 স্যার দূর্নীতির উৎসটা জানলেইতো,তার মূলোৎপাটন  করা সম্ভব। তাই বলছিলাম স্যার, দূর্নীতির উৎসের কিছু কথা আমাদের বলুন স্যার। দেখো বাপু যারা প্রভাবশালী ও-ক্ষমতাবান, তাদের বিরূদ্ধে কিছু বলা কিন্তু গর্হিত অপরাধ। আর সব দূর্নীতির দৃষ্টান্ত জড়ো করলে অনেকগুলো মহাভারত রচিত হয়ে যাবে।
তাই না বলাই উত্তম।
আর বলাতো এখন মহাপাপ।
তাছাড়া দূর্নীতির জন্য এখনো কারো ফাঁসি কিংবা যাবৎ জীবন হয় নাই। ওটা একটা সাধারণ ব্যাপার মাত্র।
আজ যারা দূর্নীতি করেন না, তারা বরং বেশি অবহেলিত।
তারপরও স্যার দুর্নীতি সম্পর্কে দু চারটি কথা বলুন না স্যার।
আসলে দূর্নীতির আলাপ ছাড়া এখন মোটেই জমে না স্যার।
ঠিক বলেছো- বাপু, কেবল শুনো,কাউকে কিছু  বলোনা কিন্ত ।
সামনে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসিসহ অনেকগুলো পদ খালি হতে যাচ্ছেতো।
দেখো বাপু- যারা দূর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করবেন তারাই দূর্নীতির বড় উৎস।
ঠিক কারা স্যার- - - বলুননা।

আসলে রাজনীতিকে আশ্রয় করেই দুর্নীতির সকল উৎস, যত জয়যাত্রা। এই যেমন,নোমিনেশন দেয়া থেকে হয় শুরু আর ভোটার পর্যন্ত হয় বিস্তৃত।
আর শেষ হয় কোথায় স্যার।
ঠিক জানিনা বাপু।
স্যার আপনার দৃষ্টান্ত একদম সঠিক ।
আরো দু চারটি আমাদের বলুননা স্যার।

দেখো বাপু , তোমরা এখন অনেক হয়েছো।আমাকে দিয়ে এগুলো বলানোর কি প্রয়োজন। তোমরা আমার  দীর্ঘদিনের ছাত্র। এবার তোমরাই আমাকে নতুন কিছু শেখাও।

তোমরাই কিছু উৎসের কথা আমাকে বলো।
ঠিক বলেছেন স্যার। এটাইতো ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক।
স্যার আমাদের চলতে হয় অনেক আঁকাবাঁকা সর্পিলপথে। তাই আপনাকে বললে স্যার সোজাসুজি উৎসের  কথাই বলতে হয়।
এই যেমন স্যার, যেখান থেকে অর্থের বরাদ্ধ হয়, সেখান থেকেই দূর্নীতির যাত্রা হয় শুরু । আর শেষ হয় পথোরেখার শেষ প্রান্তে গিয়ে। আবার হয় শুরু, আবার হয় শেষ, এই চক্রাকারেই স্যার। স্যার, দূর্নীতি এখন সেই ঢাকাই মসলিন শাড়ীর সুক্ষবুনোনের মতোই স্বচ্ছ, একেবারে এসপার ওসপার প্রত্যক্ষন করা যায়। যা একেবারে শৈল্পীক রুপ লাভ করেছে স্যার।
 
স্যার, এখন বরং কাউকে দূর্নীতিবাজ বললে উনারা প্রচন্ড রেগে যান। কেননা, দূর্নীতিকে উনারা এক অসাধারণ শিল্পকলায় রন্ধ্রে রন্ধ্রে গড়েছেন, প্রায় উপসর্গহীন করোনার মতোই। তাই বলছিলাম স্যার, উনাদেরকে এখন  দূ্র্নীতিবাজ না বলে বরং এই শিল্পের শিল্পী বলাই উত্তম।
গুড, ভেরি গুড; তোমরাই আমার মেধাবী ছাত্র।

-জহির উদ্দিন।
শাহ নিমাত্রা এস.এফ ডিগ্রি কলেজ
জুড়ি মৌলভীবাজার।

user
user
Ad
Ad