`

স্মৃতির জানালায় ক্ষণজন্মা আকাদ্দস সিরাজুল ইসলাম

  • Views: 285
  • Share:
আগষ্ট ৫, ২০২১ ২১:২৭ Asia/Dhaka

আব্দুর রহিম শামীম :: বিয়ানী বাজার উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক, মুক্তিযোদ্ধা-সাংবাদিক আকাদ্দস সিরাজুল ইসলামের ২১ তম মৃত্যু বার্ষিকী ২'রা আগস্ট ২০২১। জনাব আকাদ্দস সিরাজুল ইসলাম বিয়ানী বাজার উপজেলার মাথিউরা গ্রামের জাফর আলী খান ও জহুরা বেগমের কোল জুড়ে ২২ নভেম্বর ১৯২২ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

জন্মভূমি মাথিউরায় পাঠশালা শেষ করে পিতার কর্মস্থল কলকাতায় কেটেছে এ সাহিত্যিকের কৈশোর ও যৌবন। সেখানকার মিশনারী স্কুল সেন্ট বার্নাবাস থেকে ১৯৪০ সালে মেট্রিকোলেশন শেষ করে কলকাতার বিখ্যাত রিপন কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করেন। ছাত্রাবস্থায়ই তিনি পরাধীন ভারতবর্ষে স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েন। ওই সময় নেতাজী সুভাষ বসু’র হলওয়েল মনুমেন্ট আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। সাহিত্য যার রন্দ্রে রন্দ্রে সেই আকাদ্দাস দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রথম সাংবাদিকতা শুরু করেন। করিমগঞ্জ থেকে প্রকাশিত মুক্তবাংলা পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও সিলেটের ডাক ও প্রাচীন যুগভেরী পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখেছেন এই সাহিত্যমনা সানুষটি।

শুধু সাহিত্য নয় রাজনৈতিক অঙ্গনেও এ কৃতী মানুষটির পদচারনা ছিল চোঁখে পড়ার মত। তিনি ১৯৭৫ সালে দু’বার কারাবরণ করার পর বিয়ানীবাজারের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার মধ্যে চলে আসেন। ১৯৬৮-৯০ বিয়ানীবাজার থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৯০-৯৬ সাল পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।তার কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯১ সালে জালালাবাদ যুব ফোরাম সিলেট কর্তৃক স্বাধীনতা পদক, ১৯৯৮ সালে বিএনএস এ্যাওয়ার্ড যুক্তরাজ্য কর্তৃক স্বর্ণপদক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ত্যাগী রাজনৈতিক নেতার স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৯ সালে সংবর্ধনা প্রদান করা হয় এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁকে সম্মাননা পদক প্রদান করেন।

তাঁর লেখা ৩ শতাধিক ছোটগল্প প্রকাশিত হয় ইত্তেফাক, আজাদ, সংবাদ, পয়গাম, পূর্বদেশ, মাহে-নও, মাসিক মোহাম্মদী, সওগাত, আল ইসলাহ পত্রিকাসহ বিভিন্ন সাময়ীকীতে। তার প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস নয়াদুনিয়া, বড় গল্প নীরব নদী, ছোট গল্প পঞ্চবিংশতি, নাটক মাটির চেরাগ, কিশোর উপন্যাস সাবুর দুনিয়া, স্মৃতিচারণ বন্দী জীবনের কিছু কথা, কারাগার থেকে বেরিয়ে, গল্প চাল-চিত্র, যুগল উপন্যাস রাক্ষুসে বন্যা উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিকায় রচিত নাটক ‘সোনার বাংলা’ মঞ্চস্থ হয়।
 
২রা আগষ্ট ২০০০ সালে এতদঞ্চলকে শোকের ছায়ায় ভাসিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চির নিদ্রায় শায়িত হন। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।
 
ষাট দশকের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আকাদ্দস সিরাজুল ইসলামের জীবদ্দশায় 'নয়া দুনিয়া'(উপন্যাস, প্রকাশ কাল - ১৯৫৩), 'নীরব নদী' (বড় গল্প, প্রকাশ কাল - ১৯৬৫), ' পঞ্চবিংশতি', (ছোট গল্প, প্রকাশ কাল- ১৯৬৭), ' মাটির চেরাগ',(নাটক, প্রকাশ কাল- ১৯৬৯) ' সাবুর দুনিয়া'( কিশোর উপন্যাস, প্রকাশ কাল- ১৯৮৪), ' বন্দী জীবনের কিছু কথা', (স্মৃতিচারণ, প্রকাশ কাল- ১৯৮৭)' কারাগার থেকে বেরিয়ে,( স্মৃতিচারণ, প্রকাশ কাল- ১৯৮৯) ','চালচিত্র' ( গল্প, প্রকাশ কাল- ১৯৮৯) এবং ' রাক্ষুসে বন্যা এবং' ( যুগল উপন্যাস, প্রকাশ কাল- ১৯৯৭)এ ৯টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয় ।মুক্তিযুদ্ধ কালীন আসামের করিমগঞ্জ থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্র সাপ্তাহিক 'মুক্তবাংলা'র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন তিনি । মৃত্যুর পর তাঁর রচনা সমগ্র ২ খণ্ডে প্রকাশিত হয়। এছাড়া একটি স্মারক গ্রন্থও বেরিয়েছে।

পারিবারিকভাবে দিনটি পালন করা হবে। এদিন মরহুমের গ্রামের বাড়িতে (জাফর মঞ্জিল, মাথিউরা,বিয়ানীবাজার) কবর জেয়ারত, কোরানখানি ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

উল্লেখ্য যে , আমাদের আদর্শিক এই ক্ষণজন্মা পুরুষ ব্যাক্তিগত জীবনে ছিলেন অত্যন্ত হাসি খুশী আমি শ্রদ্ধাভরে উনাকে দাদা বলে ডাকতাম উনি ও আমাকে খুবই স্নেহ করতেন যা আজ স্মৃতির জানালায় বার বার উকি ঝুঁকি মারছে। খুবই মনে পড়ছে দাদা তোমাকে , কলেজ রোডে এমাদ ভাইয়ের রেস্টুরেন্টে তোমাকে চা খাওয়াতাম। আর তুমি তখন চায়ের সাথে বিস্কুট ভিজিয়ে আয়েশে বসে খেতে আর এ দৃশ্য আমি দু'চোখ ভরে দেখতাম আমার খুবই আনন্দ লাগতো তাই তোমাকে পেলেই জোর করে চা খাওয়াতে নিতাম, সেই থেকে শিখেছিলাম আর আজ ও আমি চায়ের সাথে বিস্কুট ভিজিয়ে খেতে ই তোমার কথা বার বার মনে পড়ে ভুলতে পারিনা । আর তোমার কাপড় পরার স্টাইল খুবই ভালো লাগতো-বাহ ! মুজিব কোর্ট পরে যখন চাদরটি কাদে করে হাঁটতে আর আমি পেলেই তোমাকে আর ছাড়তে চাইতাম না।

দাদা আজ দুঃখ হয় তোমার মৃত্যু বার্ষিকী পারিবারিক ভাবে হচ্ছে শুনে! আমার প্রশ্ন বিয়ানী বাজারে অথবা মাথিউরা কোথাও কি আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেই ? সব মরে গেছে? আর তোমার প্রিয় প্রেসক্লাব ও কি মরে গেছে? মরে যা সবাই বেঁচে কি লাভ? তোমাদের কোন দায় নেই !! আজিজ দাদার মৃত্যুর পর দেখেছি তাদের ভালোবাসা! কেন আজ প্রতিটি ইউনিয়ন, উপজেলায় শোক সভা, স্মরণ সভা হচ্ছে না? এ প্রশ্নগুলো পাঠক ও সচেতন মহলের নিকট রেখে দিলাম।

লেখক 
আব্দুর রহিম শামিম। 
লেখক সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ

user
user
Ad
Ad