`

দরগাহে একদিন!

  • Views: 4154
  • Share:
আগষ্ট ৪, ২০২৩ ১৮:০৪ Asia/Dhaka

আহনাফ যাহিন:: অনেক দিন আগে হযরত শাহজালালের মাজারে গিয়েছিলাম। তাই মাজারের ভিতরে কি আছে তা প্রায় ভুলে গিয়েছিলাম। অনেকদিন থেকে মাজারে যাওয়ার ইচ্ছে মনের মধ্যে জাগলো। আর তাছাড়া স্কুল বন্ধ ফলে এ সুযোগ টুকু কাজে লাগাতে চাই। 

আমি আর বাবা মাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। মাজারের প্রধান ফটকটি বেশ সুন্দর ও আকর্ষণীয়। মাজারে ঢুকেই আমরা অজু করে এশার সালাত আদায় করি। আমরা যে মসজিদে এশার সালাত আদায় করি সে মসজিদটি খুবই প্রাচীন। বাংলার সুলতান আবু মোজাফফর শাহের সময়কালে চতুর্দশ শতকে দরগাহের মসজিদ নির্মিত হয়। যা পরবর্তীতে বাহারাম খানের সময়ে ১৭৪৪ সালে পূণ:নির্মিত হয়।

টিলাতেই হযরত শাহজালাল থাকতেন এবং আল্লাহর ইবাদত করতেন। তিনি তাঁর অনুসারীদের ইসলাম প্রচারের নির্দেশ দেন। এবং কয়েকজন সফর সংগীকে নিজের কাছে রেখে  দেন।দরগাহের ভিতরে উনার ব্যবহৃত নানা জিনিস রয়েছে।এশার সালাত আদায়ের পর আমরা কবর জিয়ারত করি।আগের বার যখন এসেছিলাম তখন কবর যিয়ারাত করতে পারিনি। প্রথমবারের মতো করতে পেরে বেশ ভালো লাগলো। তারপরে আমরা পাশের কবরস্থান দেখতে যাই।এখানে নানাগুণী মানুষের কবর রয়েছে।তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী কাপ্তান মিয়া বংগবীর আতাউল গনি ওসমানী এবং  সালমান শাহ সহ নানাজনের সমাধি রয়েছে।কবর যিয়ারাত শেষে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে আসি।

মাজারের ভিতরে চিল্লাখানা রয়েছে। যেখানে হযরত শাহজালাল আল্লাহর ইবাদতে সময় পার করতেন। এখানে অনেক কবুতর রয়েছে।যা কিনা জালালি কবুতর নামে খ্যাত। দিল্লীর দরবেশ নিযামউদ্দীন আউলিয়া হযরত শাহজালাল কে একজোড়া কবুতর উপহার দেন।পরে এ কবুতরের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। এসব কবুতরের বংশধরেরা এখনো ও মাজারে আছে।মাজারে একটি বড় পুকুর রয়েছে। যেখানে গজার মাছ আছে। এই মাছ ২০০৩ সালে বিষক্রিয়ায় মারা যায়।পরে শাহজালালের আরেক সফরসংগীর মাজার থেকে কয়েকটি মাছ এনে পুকুরে রাখা হয়।বর্তমানে মাছের সংখ্যা কয়েকশো তে দাঁড়িয়েছে। মাজারের ভিতর একটি ডেকচি ঘর রয়েছে।যেখানে তিনটি বিশাল আকারের ডেকচি আছে যা তামার তৈরি। এসব ডেকচি ১৬৯৫ সালে নির্মিত।

দরগাহের ভিতর একটি মাদ্রাসা আছে। মহিলা দর্শনার্থীদের সালাত আদায়ের জন্য একটি ঘর রয়েছে। সুলতানী আমল থেকে দরগাহে নানা উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে।সুলতানী আমলের নানা স্থাপনা এখনো দরগাহে রয়ে গিয়েছে। এই দরগা সিলেটের অন্যতম প্রধান পর্যটন স্থান। এখানে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ আসে দেশ ও বিদেশ থেকে।শাহজালালের সিলেট  বিজয়ের  মাধ্যমে ইসলামের প্রসার ঘটে। হযরত শাহজালালের মামা তাঁকে একমুঠ  মাটি দেন। এবং ভারত বর্ষের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার নির্দেশ দেন। যে অঞ্চলে এই মাটির স্বাদ বর্ণ মিলবে সেখানেই বসতি গড়ে ইসলাম প্রচার করতে  বলেন। হযরত শাহজালাল একজন সাথীকে মুখে চুষে মাটি নিয়ে যাওয়ার কাজ দেন। এ থেকে তাঁর নাম হয় চাষনী পীর। ঘটনাক্রমে শাহজালালের সঙ্গে দেখা হয় সৈয়দ নাসির উদ্দীনের। তারা একসাথে সিলেট বিজয়ের উদ্দেশ্য রওয়ানা হন।সিলেট বিজয়ের পর শাহজালাল এখানে বসতি স্থাপন করেন। এবং আল্লাহর ইবাদতে মন দেন। আমরা মাজার দেখা শেষে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেই।

আহনাফ যাহিন, পঞ্চম শ্রেণি, ব্লুবার্ড স্কুল এন্ড কলেজ, সিলেট।

user
user
Ad
Ad