যাপিত জীবনে বৈপরীত্য!
ফারহানা ইসলাম:: দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় কত অদ্ভুত বৈপরীত্য আমরা লালন করি যা ভাবতেই অবাক লাগে! মাইক্রোফোনে শ্রোতার সামনে নীতিবাক্য আওড়াতে আওড়াতে মুখে ফেনা তোলা লোকটা যে কতটা নীতিহীন কাজ করে প্রতিদিন-সে হিসাব হয়তো সে নিজেও রাখে না।পুঁজিবাদী সমাজে ভোগ্য পণ্যের অতিশয় আতিশয্যে আমরা প্রতিনিয়ত বিলাসী পণ্যের পিছনে ঘুরি।
অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় পণ্যের দাম নির্ধারণ থেকে শুরু করে উৎপাদনের প্রতিটি পর্যায়ে কতটা বিবেকহীন কাজ অবলীলায় করে যাই। তার হিসেব কয়জনই বা কষি? অথচ এই পুরো প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত লোকেরাই বাহ্যিক ধর্ম পালনে খুবই সচেতন । যারা কিনা ইবাদতের ফসল হিসেবে পরতে পরতে কপালে কালো দাগ ফেলে দেই।মানবিকতার সাথে কাজ করতে বলার বক্তব্য প্রদানকারী ব্যক্তিটিও প্রতিনিয়ত তার গৃহে গৃহিণী বা কর্মীর সাথে কতটা অমানবিক হতে পারে তা সবারই বোধ হয় জানা। সাম্যবাদে বিশ্বাসী লোকদের অতি ভোগ প্রবণতার বিষয়টি হয়তো নিজেরই জানা নেই। অথচ সে সম্পদে ব্যক্তি মালিকানাতেই বিশ্বাস করে না। কার পোশাক কত দামি এবং বাহারী ট্রেন্ডি ব্র্যান্ডেড নিয়ে নিরবে প্রতিযোগিতা চলে। এসব অনুশীলন যা এসময়ে স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজে সীমিত সামর্থ্যের মানুষজনের ভদ্রস্থ হয়ে থাকতে অনেকেরই হিমশিম খেতে হয়। অথচ তারাই বলে লোক দেখানো সংস্কৃতিতে আমি বিশ্বাসী নই। এসবে কি প্রকৃত পক্ষে সুখী হওয়ার সুযোগ আছে?
কারো বাসায় দাওয়াতে গেলে অতিথি এবং আপ্যায়নকারী উভয়ের ই নিজের সামর্থ জাহির করার প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় যা বলার অপেক্ষায় রাখে না। রসনা বিলাসে নানা পদের খাবার কত পদের যে ডেজার্ট নাস্তা। যার অধিকাংশই কিনা অপচয় হয়। এত এত পদের ব্যবস্থা না করে লোক দেখানো সংস্কৃতির পাশ কাটিয়ে যদি স্বল্প পরিসরে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করলে দাওয়াত প্রদানকারীর যেমন অধিক পরিশ্রম ও ক্লান্তি থেকে মুক্তি পেতো পাশাপাশি অতিথিদের প্রতিও অধিক আন্তরিকতা দেখানোর সুযোগ সৃষ্টি হতো। তাতে খাবার এবং অর্থ দুটোই সাশ্রয় হবে।
দিন কয়েক আগে রমজান মাসে ইফতার মাহফিলের বাহুল্য দেখে মনে হয় বিভিন্ন গ্রুপে গ্রুপে ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহণ না নিলে যেন প্রচলিত ব্যবস্থার বাইরেই চলে যেতে হবে। অথচ এসব ইফতার মাহফিলে খাবারের যে পরিমাণ অপচয় করা হয়েছে তা যদি গরীব দুঃখীর মাঝে বিতরণের ব্যবস্থা করা যেত তাতে কতই না ভালো হতো। এবং যার মাধ্যমে রমজানের প্রকৃত তাৎপর্য ও উপলব্ধি করা যেতো।বাহারি স্বাদের এসব খাদ্যদ্রব্যের পশরা দেখে মনেই হবে না যে রমজান মাস হচ্ছে সংযমের মাস?
ঈদের শপিং হচ্ছে আরেকটা শো অফ এর জায়গা। কার শপিং কত দামি দামি ব্র্যান্ডের তা নিয়ে ও চলে বিরামহীন প্রতিযোগিতা। সমাজের উচ্চবিত্তের কথা আলাদা। মধ্যবিত্ত সমাজে এ ধরনের প্রতিযোগিতার ইতিবাচক প্রভাবের চেয়ে নেতিবাচক প্রবণতাই সর্বাংশে কাল হয়ে দাঁড়ায়।মুখে মুখে বলি বাচ্চাদের বেশি ভোগবিলাসে আসক্ত করা যাবে না। অথচ এসব আসক্তিতে অভিভাবকদের ভুমিকা ই মুখ্য। সামনের কোরবানির ঈদেও ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হওয়ার চেয়ে কে কত দামে কোরবানির পশু ক্রয় করলো সে প্রশ্ন ভাইরাল হয়ে যাবে। অথচ তা হওয়া কাম্য নয়?
বর্তমান সময়ে বিয়ে-শাদী সহ সামাজিক উৎসব অনুষ্ঠান পার্বণে মাত্রাতিরিক্ত জাঁকজমকের বিষয়টি নিয়ে ও কারো মাথাব্যথা নেই। সাধ্যের মধ্যে থেকে কি এসব আচার সুন্দর এবং রুচিসম্মত করা যায় না?কেন এত মেকি লোক দেখানো হাবভাব। ফেসবুকে সুন্দর সুন্দর ছবি আপলোড দিতে না পারলে দাম্পত্য জীবন যেন পানশে মনে করেন অনেকেই। অথচ মেড ফর ইচ আদার স্ট্যাটাস দেয়া হাস্যময়ী দম্পতির নিয়মিত ছবি আপলোড দেয়া মানুষটার সংগীটাও সুখ খোঁজে নতুন সঙ্গীতে। তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে তছনছ হয়ে যায় সাজানো সুুখের সংসার।এসব খবর আমরা রাখতে চাই না। দেশের ভেতর এবং দেশের বাইরে কে কত জায়গায় বেড়াতে যেতে পারলো তা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমেও চলে হইচই।
এসব বাদ দিয়ে লোক দেখানো মেকি প্রতিযোগিতায় গা না ভাসিয়ে অনায়াসে ই কি সুখী হওয়া যায় না? কথা এবং আচরনের মিল রেখে সমাজটাকে সুন্দর করতে ভূমিকা রাখা যায় সহজেই। প্রতিনিয়ত বৈপরীত্যের মধ্যে থাকতে থাকতে নিজেকে বড্ড বেমানান আর খাপছাড়া মনে হয়। গানের কলির মত হিতাক তোকে মানাইছে না রে-। নিজের স্বকীয়তা বজায় রেখে ভালো ভাবে বাঁচতে পারবো এরকম লাল মাটির দেশের সন্ধান কি আছে কারো কাছে? শো -অফের সংস্কৃতির অবসান হোক হাসিমুখে সাধ্যের মধ্যে সেরা সুখটুকুন নিয়ে বাহিত করতে চাই জীবনের পথটুকু।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান , এমসি কলেজ, সিলেট।
- স্কুল বন্ধের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়
- সারা দেশে হিট অ্যালার্টের মাঝে সিলেটে বৃষ্টির আভাস, তবে বাড়বে ভ্যাপসা গরম
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত শনিবার
- শপথ নিলেন আপিল বিভাগের তিন বিচারপতি
- যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভ
- যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নি ষি দ্ধে র বিল সিনেটে পাস
- শিক্ষা খাতে দুর্নীতি-অনিয়ম চলছে লাগামহীন
- সিনেমা হল ভেঙে হচ্ছে মাদ্রাসা
- সিলেটে নামাজ পড়াতে যাওয়ার সময় বজ্রপাতে ইমামের মৃত্যু
- মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগন্য: ভিসি ড. জহিরুল হক
- স্কুল বন্ধের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত শনিবার
- শপথ নিলেন আপিল বিভাগের তিন বিচারপতি
- সিনেমা হল ভেঙে হচ্ছে মাদ্রাসা
- রমজানে খোলাই থাকছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: আপিল বিভাগ
- আজ পবিত্র শবেমেরাজ
- পাঠ্যক্রমে পরীক্ষা পদ্ধতি ফেরাতে পথ খুঁজছে সরকার
- রমজান মাসে খোলা থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
- রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র
- সব ধরনের খেলাধুলার প্রতি বিশেষভাবে নজর দিতে হবে: প্রধানমন্ত্রী