`

কেন আমাকেই পারফেক্ট হতে হবে?

  • Views: 6266
  • Share:
মার্চ ৭, ২০২৩ ২০:১৮ Asia/Dhaka

ফারহানা ইসলাম:: আমি নারী সব পারি। ইদানিং এই স্লোগানটা অনেক ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ব্যবসায়িক সাফল্যের জন্য পণ্যের বিজ্ঞাপনে হরহামেশাই এই স্লোগানটা ব্যবহৃত হয়। আসলেই  কি একজন নারীর পক্ষে সব পারা সম্ভব? আমার কাছে উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ এবং  না। নারী গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদানের মত অতিব জটিল ও কঠিন কর্মটি হাসিমুখে করতে পারলেও তার প্রাপ্য সম্মানটা সমাজ থেকে এত সহজে অর্জন করতে পারে না। 

একজন সফল কর্মজীবী নারী কর্মক্ষেত্রে  বা ক্যারিয়ারের জন্য শ্রম দিতে গিয়ে সংসারে যথেষ্ট  সময় দিতে পারেন না। আবার রূপচর্চা  বা গ্ল্যামার বাড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত  সময়ের ও তার অভাব। নারীকে সফলতার সাথে সাথে নিজের চেহারার  গ্লু-টা ও বাড়াতে হবে, সেই সময়টুকু তার কোথায়?আবার একজন গৃহিণী পরিপাটি করে সাংসারিক কর্ম সম্পাদন করে, পরিবারের আবাল বৃদ্ধ বনিতা সবার জন্য সময়মতো খাবার ও টিফিন রেডি করে, সন্তানকে যথাসময়ে স্কুল কোচিং থেকে আনা নেয়া করে তাকে পড়িয়ে নিজের গ্লু বাড়ানোর জন্য সময় ও ধৈর্য্য থাকার কথা নয়।  অন্য এক নারী যিনি  সংসার ও ক্যারিয়ারে কম সময় দিয়ে নিজের সৌন্দর্য বৃদ্ধির দিকে সচেষ্ট থাকলেও তাকে প্রতিনিয়ত তিরস্কারে জর্জরিত করা হয়।  তো নারী বেচারা করবেটা কি? 

একই নারী চেহারার গ্লু বাড়াবে, কর্মক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের জন্য সর্বোচ্চ সচেষ্ট থাকবে সাংসারিক দায়িত্ব যথাযথ পালন করবে।কেন ভাই?  এত দায়িত্ব কেন একা নারীকে নিতে হবে? হ্যাঁ  কেউ কেউ উচ্চ ধৈর্য্য সম্পন্ন নারী যিনি একহাতে সবকিছু সামলাতে পারংগম। তাদেরকে স্যালুট জানাতে ও আমরা কুন্ঠাবোধ করি। আর যারা সংসার সামলাতে গিয়ে ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত করি অথবা  কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন  করতে গিয়ে সংসারের কর্ম সূচারুভাবে সম্পাদন করতে পারিনা তাদেরকে হেয় না করাই প্রকৃত মনুষত্বের পরিচয়। 

নারী হলেও সে একজন রক্তমাংসের মানুষ তারও ভালো লাগা এবং খারাপ লাগা বোধ থাকতে পারে,শখ আহ্লাদ থাকতে পারে এবং  বিশ্রাম নেওয়ার ইচ্ছা ও থাকতে পারে। আসুন সেইসব ইচ্ছাকে হেয় না করে সম্মান জানাই।কর্তাপুরুষটি রাত জেগে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পারে বউবাচ্ছাদের বাসায় রেখে ট্যুরে যেতে পারে -তো নারী কেন পারবেনা? সন্তান জন্মের পর নারী নিজের কথা ভুলে যায়। তার কারণটি কেবলমাত্র আমাদের মনো:সামাজিক। নারীর নিজের একটা নাম আছে মা মেয়ে বা কারো স্ত্রী পরিচয় ছাড়াও পরিচিত হওয়ার ইচ্ছে কি খুব অমূলক?একজন কর্মজীবী নারী তার আর্থিক বিষয়ের সিদ্ধান্ত ও একা নিতে পারেন না। তিনি স্বনির্ভর হয়েছেন কিন্তু তার ক্ষমতায়ন হয়নি। অর্থ রোজগার করলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তার ভূমিকা নেই। তো একজন নারী কর্মজীবী বা গৃহিণী যাই হোক সব সময় পুরুষের কাছে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে কেন? পরিবার সমাজ রাষ্ট্র নারীকে অধঃস্থন করে রেখেছে অদ্যবধি। কিন্তু

একজন পুরুষ মানেই পরিবারের প্রধান ব্যক্তি সমাজের গণ্যমান্য শ্রেষ্ঠ। তার নিজেকে প্রমাণের কিছু নেই। কোন প্রকারেই নয়। যারা সব দিক সামলাচ্ছেন সে-সব  নারীদের স্যালুট জানানোর পাশাপাশি যারা একদিক সামাল দিতে গিয়ে  অন্যত্র খেই হারিয়ে ফেলছেন  তাদের প্রতি ও সমান সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাই। আসলে পারফেক্ট বলতে ধ্রুব কোন সত্য নেই। তাই পারফেকশনিস্ট হওয়ার ভাবনা দূর করে নারীরা যেন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে নিজের পরিচয়ে বাঁচতে পারে সেই চেষ্টাই করতে হবে।

ফারহানা ইসলাম
সহকারী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ,
এমসি কলেজ,  সিলেট।  

user
user
Ad
Ad