অহংকারী ও দাম্ভিকদের নির্মম পরিণতি

মোঃ আবদুল গনী শিব্বীর:: মানব চরিত্রের সবচেয়ে মন্দ বৈশিষ্ট্য হলো অহংকারী মনোভাব ও দাম্ভিকতা। ধরাকে সরা জ্ঞান করা দাম্ভিকদের চিরচেনা অভ্যাস। অহংকারী দাম্ভিক কাউকেই পাত্তা দেয় না, নিজেকে সর্বসের্বা মনে করে। বিধাতার বিধানের প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ নেই, মানবীয় অভ্যাসের বদলে দানবীয় কার্যক্রমই তাদের নিকট সঠিক বলে বিবেচিত হয়। অহংকারী দাম্ভিকদের আল্লাহ পছন্দ করেন না। যুগে যুগে বিভিন্ন জাতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, দাম্ভিকদের পরিণতি বেশ নির্মম ও মর্মন্তুদ।
মহান প্রভু তাদের হেদায়েতের জন্য তাদের নিকটে বিভিন্ন নবী রাসুলদের প্রেরণ করেন, যাতে তারা অহমিকা, গর্ব ও দাম্ভিকতা ছেড়ে আল্লাহর বড়ত্ব স্বীকার করে। আল্লাহর বিধানকে যথাযথভাবে মান্য করে। আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত ক্ষমতাকে আমানত বিবেচনা করে তাঁরই বিধান মোতাবেক রাষ্ট্রীয় শাসন পরিচালনা করে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, ক্ষমতা পেয়ে অনেকেই দাম্ভিকতার বশে আল্লাহর বিধানকে, আল্লাহর প্রেরিত নবী রাসুল কিংবা তাঁদের প্রতিনিধিদেরকে অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করে বসে। জুলুমকে ক্ষমতা রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। বিধাতার বিধানের বিপরীত বিধানকেই রক্ষাকবচ মনে করে। এমন দাম্ভিকতাপূর্ণ আচরণ আল্লাহ পছন্দ করেন না। তিনি দাম্ভিকদের কৃতকর্মের প্রতিফল স্বরূপ তাদেরকে নির্মম শাস্তিতে নিপতিত করেন। পবিত্র কোরআন ও হাদীস পর্যালোচনা পূর্বক দাম্ভিকদের নির্মম পরিণতি তুলে ধরা হল।
পবিত্র কোরআন মাজিদে দাম্ভিকদের পরিণতিঃ
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআন মাজীদে আল্লাহপাক বলেন, অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। (সুরা লোকমান: আয়াত: ১৮)।
তিনি অন্য আয়াতে বলেন, অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।‘নিশ্চয় আল্লাহ দাম্ভিক আত্ম-গর্বিত ব্যক্তিকে কখনো পছন্দ করেননি। (সুরা আন নিসা: আয়াত: ৩৬)।
এভাবে পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন স্থানে আল্লাহপাক বলেন, তোমাদের সত্যিকার উপাস্য হচ্ছে এক আল্লাহ, কিন্তু যারা পরকালকে বিশ্বাস করে না তাদের অন্তর সত্য-বিমুখ এবং তারা অহঙ্কারী। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদের গোপন ও প্রকাশ্য অবস্থা সবই অবগত আছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সেই লোকদের কখনও ভালবাসেন না যারা আত্ম-অহঙ্কারে নিমজ্জিত। (সুরা আন নাহল: আয়াত: ২২-২৩)।
এখন যাও জাহান্নামের দ্বারসমূহে প্রবেশ কর, সেখানেই তোমাদের চিরদিন অবস্থান করতে হবে, বস্তুত ইহা হচ্ছে অহঙ্কারীদের নিকৃষ্ট বাসস্থান। (সুরা আন নাহল: আয়াত: ২৯)।
যা তোমাদের হস্তুচ্যুত হয় এতে যেন তোমরা দুঃখিত না হও, আর যা তোমাদের দান করেছেন এতে যেন তোমরা গর্বিত না হও। আল্লাহ কোন অহঙ্কারী গর্বিত লোককে পছন্দ করেন না।’ (সুরা আল হাদীদ: আয়াত: ২৩)।
‘আমি অপরাধী লোকদের সঙ্গে এরূপই ব্যবহার করে থাকি, তাদেরকে যখন বলা হত আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তখন তারা অহঙ্কারে ফেটে পড়ত।’ (সুরা আস সাফফাত: আয়াত: ৩৪-৩৫)।
আমি কত গ্রামগঞ্জ ও বস্তিই না ধ্বংস করে দিয়েছি যার অধিবাসীরা স্বীয় জীবিকা ও সহায় নিয়ে গর্ব অহঙ্কার করতো। এগুলোই তাদের ঘরবাড়ি, তাদের পরে সেখানে কমসংখ্যক লোক বসবাস করেছে। অবশেষে আমিই চূড়ান্ত মালিক রয়েছি। (সুরা আল কাসাস: আয়াত: ৫৮)। সেই সব লোকের জন্য ধ্বংস ও ক্ষতি অবধারিত যারা অপরের দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান করে আর পরনিন্দা চর্চায় পঞ্চমুখ হয়। (সুরা আল হুমাযা: আয়াত: ০১)
পবিত্র হাদীস শরীফে দাম্ভিকদের পরিণতিঃ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) বলেছেন, যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ অহঙ্কার থাকবে, সে বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না। এক ব্যক্তি বললো হুজুর কেউ যদি তার লেবাস, পোশাক ও জুতা উত্তম হওয়া পছন্দ করে? (তাহলে সেটাও কি অহঙ্কার) রাসূল (সা.) জবাব দিলেন অবশ্যই আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন। প্রকৃতপক্ষে অহঙ্কার হল আল্লাহর গোলামী হতে বেপরোয়া হওয়া এবং মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করা। (মুসলিম)।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা যা ইচ্ছা খাও এবং যা ইচ্ছা তা পরিধান করো এ শর্তে যে অহঙ্কার ও অপব্যয় করবে না। (বুখারী)। হযরত হারেছা ইবনে ওহাব (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, অহঙ্কারী ও অহঙ্কারের মিথ্যা ভানকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (আবু দাউদ)।
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছি- মুমিনের পরিধেয় বস্ত্র পায়ের নলার মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রলম্বিত থাকে। যদি তার নীচে এবং গিরার উপরে থাকে তাহলেও কোন দোষ নেই। আর যদি গিরার নীচে চলে যায় তাহলে তা হবে জাহান্নামীর কাজ একথা রাসূল (সা.) তিনবার বললেন যাতে সবার কাছে এর গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে যায়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন আল্লাহ সে ব্যক্তির প্রতি কিয়ামতের দিন তাকাবেন না যে অহঙ্কারপূর্বক ভূমি স্পর্শকারী পোশাক পরিধান করে। (আবু দাউদ)।
বিভিন্ন যুগে দাম্ভিকদের পরিণতিঃ
কওমে আদ বা আদ জাতিঃ আদ জাতির লোকেরা ছিল উন্নত। নির্মাণশিল্পে তারা ছিল জগতসেরা। তারা সুরম্য অট্টালিকা ও নয়নাভিরাম বাগান তৈরি করত। তাদের তৈরি ইরাম-এর মতো অনিন্দ্য সুন্দর শহর পৃথিবীর আর কোথাও ছিল না। তারা ভাস্কর্য ও অঙ্কন শিল্পে ছিল দক্ষ। জ্ঞান-বিজ্ঞানে তারা যেমন অগ্রসর ছিল, তেমনি সংস্কৃতিতেও অনন্য। আদ জাতির লোকদের সতর্ক করার জন্য আল্লাহ হযরত হুদ (আ.)-কে দুনিয়ায় পাঠালেন। হযরত হুদ (আ.) আদ জাতির লোকদের দাম্ভিকতা পরিত্যাগ করার আহ্বান জানালেন এবং আল্লাহর ইবাদত করার উপদেশ দিলেন। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে জীবন পরিচালনার কথাও বললেন। হযরত হুদ (আ.) বললেন, ‘তোমরা মজবুত অট্টালিকা বানিয়েছ এ জন্য যে, তোমরা এখানে চিরকাল থাকবে। তোমরা যখন তোমাদের দুর্বলের ওপর জুলুম করো তখন তোমরা স্বৈরশাসকের মতো বর্বর আাচরণ করো। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমাকে মান্য করো। কিন্তু লোকেরা হুদ (আ.)-এর কথা শুনল না, বরং তারা তার কথা প্রত্যাখ্যান করল। তাকে বোকা ও মিথ্যাবাদী বলে গালাগাল দিল। নবীর প্রতি এরূপ অন্যায় আচরণে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হলেন। ফলে আদদের এলাকায় দেখা দিল প্রচন্ড খরা। এতে তিন বছর তারা দুর্ভিক্ষের মধ্যে কাটাল। তারপরও তাদের স্বভাব-চরিত্রে কোনো পরিবর্তন হলো না। এবার সেখানে শুরু হলো ভয়ানক ঝড়। এই ঝড় সাত রাত ও আট দিন ধরে চলল। ফলে গোটা আদ এলাকা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হলো। আল্লাহ তার রহমতে হযরত হুদ (আ.) ও তার অনুসারীদের রক্ষা করলেন।
কওমে লুত বা লুত (আ.) এর জাতিঃ
পৃথিবীতে সর্বপ্রথম সমকামিতার বিকৃত পাপাচারে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল লুত (আ.)-এর জাতি। ইরাক ও ফিলিস্তিনের মধ্যবর্তী স্থানে এই জাতিটির বসবাস ছিল। এই জাতির কেন্দ্রীয় শহর ছিল ‘সাদুম’ নগরী। সাদুম ছিল সবুজ শ্যামল এক নগরী। কারণ এখানে পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ ছিল। ফলে ভূমি ছিল অত্যন্ত উর্বর এবং শস্যে ভরপুর। এমন প্রাচুর্যময় জীবনযাত্রা বেপরোয়া করে তোলে তাদের। বেপরোয়া জীবনযাত্রার কারণেই সর্বপ্রথম সমকামিতার প্রবণতা দেখা দেয়। ইসলামের দৃষ্টিতে এই জঘন্য অপকর্ম তারা প্রকাশ্যে করে আনন্দ লাভ করত।
হযরত লুত (আ.) ও তাঁর কওম সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বলেন, ‘আর লুতকে আমি প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দান করেছিলাম। আমি তাকে এমন এক জনপদ থেকে উদ্ধার করেছিলাম, যার অধিবাসীরা অশ্লীল কাজে লিপ্ত ছিল। তারা ছিল এক মন্দ ও পাপাচারী কওম। আর আমি তাকে আমার রহমতের মধ্যে শামিল করে নিয়েছিলাম। সে ছিল সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভূক্ত।’ (সূরা আম্বিয়া: আয়াত: ৭৪-৭৫)।
হযরত লুত (আ.) তার কওমের পাপাচারী দাম্ভিকদেরকে এসব অশ্লীল কাজ ছেড়ে দেয়ার দাওয়াত দেন এবং তাদেরকে তাওবা করার অনুরোধ জানান। কিন্তু তারা তাঁর দাওয়াতে সাড়া না দিয়ে উল্টো তাঁকে হত্যা করার জঘন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে হত্যা করতে উদ্ধত হয়। অবশেষে একদিন আল্লাহর গজব নাজিল হয় ওই পাপাচারী জাতির বিরুদ্ধে। তাদের ওপর মহাপ্রলয় নেমে আসে। এক শক্তিশালী ভূমিকম্প পুরো নগরটি সম্পূর্ণ উল্টে দেয়। ঘুমন্ত মানুষের ওপর তাদের ঘরবাড়ি আছড়ে পড়ে। পাশাপাশি আকাশ থেকে বৃষ্টির মতো কঙ্কর নিক্ষিপ্ত হতে থাকে। ওই মহাপ্রলয়ের হাত থেকে কেউ রেহাই পায়নি। ওই জনপদের ধ্বংসাবশেষ এখনো বিদ্যমান।
আল্লাহপাক বলেন, ‘তারা বলল, হে লুত, তুমি যদি বিরত না হও, তবে অবশ্যই তোমাকে বহিস্কৃত করা হবে। লুত বললেন, আমি তোমাদের এই কাজকে ঘৃণা করি। হে আমার পালনকর্তা, আমাকে এবং আমার পরিবারবর্গকে তারা যা করে, তা থেকে রক্ষা করো। অতঃপর আমি তাকে ও তার পরিবারবর্গকে রক্ষা করলাম। এক বৃদ্ধা ব্যতীত, সে ছিল ধ্বংস প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত। এরপর অন্যদেরকে নিপাত করলাম। তাদের ওপর এক বিশেষ বৃষ্টি বর্ষণ করলাম। ভীতি-প্রদর্শিতদের জন্য এই বৃষ্টি ছিল কত নিকৃষ্ট। নিশ্চয়ই এতে নিদর্শন রয়েছে; কিন্তু তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী নয়।’ (সূরা শোয়ারাহ : আয়াত: ১৬০-১৭৪)।
কওমে সামুদ বা সামুদ জাতিঃ সামুদ জাতি শিল্প ও সংস্কৃতিতে পৃথিবীতে অপ্রতিদ্বন্দী। আদ জাতির পর তারাই ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে সমৃদ্ধিশালী জাতি। কিন্তু তাদের জীবনযাপনের মান যতটা উন্নতির উচ্চ শিখরে পৌঁছেছিল, মানবতা ও নৈতিকতার মান ততই নিম্নগামী ছিল। একদিকে উন্মুক্ত প্রান্তরে পাথর খোদাই করে করে প্রাসাদের পর প্রাসাদ তৈরি হচ্ছিল, অন্যদিকে সমাজে কুফর, শিরক ও পৌত্তলিকতার প্রসার ঘটছিল। সমাজে চরিত্রহীন লোকের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
হজরত সালেহ (আ.) তাদের প্রতি প্রেরিত হয়ে সত্যের দাওয়াত দিয়েছেন, তাতে কেবল নিম্ন শ্রেণির লোকেরাই সাড়া দেয়। সালেহ (আ.) সারা জীবন তাদের হেদায়েতের পথে আনার চেষ্টা করেছেন। এতে অল্প কিছু সঙ্গী ছাড়া গোটা জাতি তার অবাধ্যই থেকে যায়। একপর্যায়ে তারা দাম্ভিকতা নিয়ে দাবি করে, আপনি যদি সত্যি নবী হয়ে থাকেন, তাহলে আমাদের ‘কাতেবা’ নামের পাথরময় পাহাড়ের ভেতর থেকে একটি ১০ মাসের গর্ভবতী, সবল ও স্বাস্থ্যবতী মাদি উট বের করে দেখান। এটি দেখাতে পারলে আমরা আপনার ওপর ইমান আনব।
সালেহ (আ.) আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। আল্লাহর কুদরতে পাহাড় থেকে একটি অদ্ভুত রকমের মাদি উট বের হয়। তা দেখে কিছু লোক ইমান আনে। কিন্তু তাদের সর্দাররা ইমান আনেনি, বরং তারা সে মাদি উটকে হত্যা করে ফেলে। এতে সালেহ (আ.) তার জাতির ওপর আল্লাহর আজাব নেমে আসার ঘোষণা দেন। তিনি তাদের সতর্ক করে দেন যে তিন দিন পরই আল্লাহর আজাব তোমাদের ধ্বংস করে দেবে। নির্ধারিত সময়ে আসমানি আজাব ও গজব এসে অবিশ্বাসীদের চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। আল্লাহপাক বলেন, তারপর সীমা লঙ্ঘনকারীদের মহানাদ আঘাত করে। ফলে তারা নিজ নিজ গৃহে উপুড় হয়ে পড়ে থাকে (ধ্বংস হয়ে যায়)। যেন তারা কখনোই সেখানে বসবাস করেনি। উদ্ধত সামুদ জাতির প্রতি হজরত সালেহ (আ.)-এর হুঁশিয়ারি সত্যি বাস্তবায়িত হয়েছে। হঠাৎ একদিন প্রচন্ড শব্দে ভূমিকম্প তাদের নাস্তানাবুদ করে ফেলে। বজ্রপাতের ভয়ংকর শব্দে মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত ও আতঙ্কিত হয়ে যায়। অবশেষে তাদের অপমৃত্যু ঘটে।
কওমে নুহ বা নুহ (আ.) এর জাতিঃ
আদমে সানী খ্যাত হযরত নুহ (আ.)-এর জাতি মূর্তিপূজা করত। আল্লাহ তায়ালা নুহ (আ.)-কে সুদীর্ঘ জীবন দান করেছিলেন। তিনি প্রজন্মের পর প্রজন্মকে মূর্তিপূজা ত্যাগ করতে বলেছেন। কিন্তু শতাব্দীর পর শতাব্দী অক্লান্তভাবে দাওয়াত দেওয়ার পরও তারা ইমান আনেনি। তিনি তার জাতিকে সত্যের পথে আনতে দীর্ঘ ৯৫০ বছর নিরলস চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। কিন্তু তারা নুহ (আ.)-এর দাওয়াত তাচ্ছিল্যভরে প্রত্যাখ্যান করে। তারা তাকে বলেছিল, ‘হে নুহ! যদি তুমি বিরত না হও, তবে পাথর মেরে তোমার মস্তক চূর্ণবিচূর্ণ করে দেওয়া হবে। বহু চেষ্টায় অহংকারী ও দাম্ভিক জাতির অল্পসংখ্যক মানুষ তার আহবানে হেদায়েতের পথে এসেছিল। তার সময়ের সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা তার কথায় কর্ণপাত করেনি। নুহ (আ.) তাদের আল্লাহর শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করেন। তবু তাদের চৈতন্যোদয় হয়নি, তারা তার কথাকে মোটেও পাত্তা দেয়নি। অবশেষে আল্লাহর আজাব আসে। এক ভয়ংকর প্লাবন ও জলোচ্ছ্বাস তার জাতির অবাধ্য লোকদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এমন প্লাবন সেই জাতিকে গ্রাস করেছিল, যেই প্লাবন হাজার বছর ধরে পৃথিবীতে ইতিহাস হয়ে আছে। তখন নুহ (আ.)-এর নৌকায় যারা আশ্রয় নিয়েছিল তারাই রক্ষা পেয়েছিল।
কওমে মুসা বা মুসা (আ.) এর জাতিঃ
হযরত মুসা (আ.) এর যমানায় অহংকার ও দাম্ভিকতায় নিজেকে খোদা দাবি করেছিল মিশরের অধিপতি ফেরাউন। তার কাছে ইমানের দাওয়াত নিয়ে গিয়েছিলেন হযরত মুসা ও হারুন (আ.)। বিনিময়ে হযরত মুসা (আ.) ও তাঁর প্রতি বিশ্বাসীদেরকে হত্যা করতে মনস্থির করে ফেরাউন। তার দাম্ভিক আচরণ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এসেছে- আল্লাহপাক বলেন,‘ফেরাউন জমিনে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছিল এবং সে তার অধিবাসীদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত করেছিল। তাদের একটি শ্রেণীকে সে অত্যন্ত দুর্বল করে রেখেছিল, যাদের পুত্রদের সে যবাই করত ও নারীদেরকে জীবিত রাখত। প্রকৃপক্ষে সে ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। (কাসাস ২৮ : ৪)।
ফেরআউনের অহংকারী মনোভাব ও দাম্ভিক আচরণের কারণে আল্লাহতায়ালা তার জাতিকে বিভিন্ন শাস্তিতে নিপতিত করেন। আল্লাহপাক বলেন, ‘অতঃপর, আমি তাদেরকে প্লাবন, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ এবং রক্ত দ্বারা পরীক্ষা করি। (সূরা আরাফ: আয়াত: ১৩৩)।
এর পূর্বের আয়াতে বলা হয়, ‘এবং নিশ্চয় আমি ফেরাউন বংশকে দুর্ভিক্ষ ও ফল-শস্য হানির দ্বারা ধৃত করেছিলাম, যেন তারা হৃদয়ঙ্গম করে।’ (সূরা আরাফ: আয়াত: ১৩০)। এ সকল শাস্তির পরও দাম্ভিক ফেরআউন ও তার জাতি শিক্ষাগ্রহণ করেনি। বরং তারা হযরত মুসা (আ.) ও তাঁর প্রতি বিশ্বাসী লোকদেরকে দুনিয়া থেকে হত্যার মাধ্যমে একেবারে নিঃশেষ করে দেয়ার জন্য সদলবলে ধাওয়া করে। তিন দিক থেকে সশস্ত্র সৈন্য ঘেরাও হওয়া মুসা (আ.) ও তাঁর দলের সামনে ছিল উত্তাল সাগর। আল্লাহর হুকুমে সাগরে পথ সৃষ্টি হয়। নিজের দল নিয়ে মুসা (আ.) এই পথ দিয়ে সমুদ্র পার হয়ে যান। কিন্তু সাগরে ডুবে মারা যায় ফেরাউন।
আল্লাহপাক ফেরআউনের নির্মম পরিণতির কথা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘ফেরাউন ও তার বাহিনী জমিনে অন্যায় অহমিকা প্রদর্শন করেছিল। তারা মনে করেছিল তাদেরকে আমার কাছে ফিরে আসতে হবে না। সুতরাং আমি তাকে ও তার সৈন্যদেরকে পাকড়াও করলাম এবং সাগরে নিক্ষেপ করলাম। এবার দেখ, জালিমদের পরিণতি কী হয়ে থাকে! (সূরা আল কাসাস: আয়াত: ৩৯-৪০)।
আল্লাহ তাকে পৃথিবীবাসীর কাছে দৃষ্টান্ত হিসেবে রেখে দিয়েছেন। আল্লাহপাক বলেন, আমি বনী ইসরাইলকে সাগর পার করিয়ে দিলাম। তখন ফিরআউন ও তার বাহিনী যুলুম ও সীমালঙ্ঘনের উদ্দেশ্যে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করল। পরিশেষে যখন সে ডুবে মরার সম্মুখীন হলো, তখন বলতে লাগল, আমি স্বীকার করলাম, বনী ইসরাইল যেই আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে তিনি ছাড়া কোনোও ইলাহ নেই এবং আমিও অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত। (উত্তর দেয়া হলো) এখন ঈমান আনছ? অথচ এর আগে তো তুমি অবাধ্যতা করেছ এবং তুমি অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে।
সুতরাং আজ আমি তোমার দেহটি রক্ষা করব, যাতে তুমি তোমার পরবর্তী কালের মানুষের জন্য নিদর্শন হয়ে থাক। (কেননা) আমার নিদর্শন সম্পর্কে বহু লোক গাফেল হয়ে আছে।’ (সুরা ইউনুস: আয়াত: ৯০-৯২)। তিন হাজার বছরেরও বেশি সময় সাগরে নিমজ্জিত থাকার পরও তার লাশে কোনো পচন ধরেনি।
এভাবে যুগে যুগে মহান রাব্বুল আলামীন হটকারী অহংকারী ও দাম্ভিক জাতির নেতা, জনগণ ও জনপদকে স্বীয় গজব ও লানত দ্বারা একেবারে সমূলে নিস্পন্ন করে দেন। আল্লাহপাক তাঁর রহমত দ্বারা যেন আমাদেরকে সিক্ত করে সকল প্রকার আযাব ও গজব থেকে হেফাজত করেন। আমীন।
লেখকঃ প্রভাষক, নোয়াখালী কারামাতিয়া কামিল মাদরাসা
খতিব, বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদ, কোম্পানীগঞ্জ, নোয়াখালী।


- একটি শক্তি ক্ষমতায় থাকার জন্য নতুন নতুন পন্থা বের করছে: আমীর খসরু
- আওয়ামী লীগকে কোনো দিন রাজনৈতিকভাবে দাঁড়াতে দেব না: উপদেষ্টা মাহফুজ
- আমেরিকা ভুল করলে ইরান পারমাণবিক অস্ত্রের দিকে এগিয়ে যাবে: ড. লারিজানি
- গরীবের ডাক্তার খ্যাত কানাইঘাটের ডা. মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আর নেই
- এমএসথ্রি টেকনোলজি বিডি পরিবারের ঈদ শুভেচ্ছা
- সুনামগঞ্জে যাত্রীবাহী নৌকাডুবির ঘটনায় ৪ জনের মৃত্যু
- মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে; ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে
- বাংলাদেশেও বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে: ফায়ার সার্ভিসের সতর্কবার্তা
- খনিজ চুক্তিতে কী আছে, অবশেষে ইউক্রেন কি মার্কিন উপনিবেশে পরিণত হচ্ছে?
- হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্যে ‘কিছুটা দ্বিমত’ জানিয়ে সারজিসের পোস্ট

- খনিজ চুক্তিতে কী আছে, অবশেষে ইউক্রেন কি মার্কিন উপনিবেশে পরিণত হচ্ছে?
- হত্যা-লুটপাটে জড়িত নয় এমন নেতৃত্বে আ.লীগের রাজনীতিতে বাধা নেই: রিজভী
- ক্যান্সারের কারণ ও প্রতিকার এবং বাস্তবতা
- সিলেটের জন্য যে ‘সুখবর’ দিলেন উপদেষ্টা ফরিদা
- ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে
- গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে আবারও যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো
- বিশ্ব শিশু দিবসে বাকায়ির টুইট: ইহুদিবাদী ইসরাইলের হাতে গাজার ১৭ হাজার শিশু নিহত
- মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি রোভার স্কাউট গ্রুপের ‘সপ্তম বার্ষিক ক্যাম্প’ সম্পন্ন
- দুই মাস বাড়ল সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা
- ২০২৫ সাল নাগাদ সরকারি নির্মাণে পোড়া ইট ব্যবহার বন্ধ হবে : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান