ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ পদ্ধতি
পুজিবাদী অর্থনীতি এবং ইসলামের রিবা ও বর্তমান সুদ সম্পর্কে স্পষ্ঠ ধারণা প্রদান ও পার্থক্য নিরূপনে কোরআন ও হাদীসের আলোকে অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক জনাব আকমল হোসেন স্যার অত্যন্ত সহজ-সরল ভাষায় "সুদ, যাকাত এবং ইসলামী অর্থনীতি" নামক প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেছেন। জালালাবাদ২৪.কম পত্রিকার তা ধারাবাহিকভাবে লেখা হচ্ছে। (১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ, ৫ম ও ৬ষ্ঠ অংশ প্রকাশের পর আজকের ৭ম পর্ব)

আকমল হোসেন:: এখন আমরা বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ কার্যক্রম সম্পর্কে (এখানে IBBL কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে) কথা বলব। ইসলামী ব্যাংক একাধিক পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করে থাকে। সাধারণত ইসলামী ব্যাংক নগদ টাকা গ্রাহককে প্রদান করে না। বিশেষ করে যেখানে ইসলামী ব্যাংক বিক্রেতা হিসেবে কাজ করে সেখানে ব্যাংক কর্তৃক গ্রাহককে নগদ অর্থ দেয়ার প্রশ্নই আসে না। যদি কোন ইসলামী ব্যাংক এক্ষেত্রে নগদ অর্থ প্রদান করে, তবে নিঃসন্দেহে শরীয়াহ লংঘন হবে।
তবে ইসলামী ব্যাংক যেখানে ক্রেতা হিসেবে বা অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করে, সেখানে ব্যাংক হতে নগদ অর্থ গ্রাহকের নিকট যেতে পারে। ইসলামী ব্যাংকসমুহের বিনিয়োগ কার্যক্রমসমূহ হলো -
(১) বাই মুরাবাহাঃ বাই মুরাবাহা পদ্ধতিতে ব্যাংক পণ্য ক্রয় করে গ্রাহকের নিকট বিক্রয় করে। অর্থাৎ এখানে ব্যাংক প্রথমে হয় ক্রেতা এবং পরে হয় বিক্রেতা। বাই মুরাবাহা তিনটি স্তরে সম্পন্ন হয়। এগুলো হলো -
(I) গ্রাহক ব্যাংকের কাছে নির্ধারিত পণ্য ক্রয়ের জন্য আসবে এবং এ বিষয়ে ব্যাংকের সাথে চুক্তি করবে। অর্থাৎ গ্রাহক ব্যাংককে নির্দিষ্ট পণ্য ক্রয় করার কথা বলবে এবং পরে গ্রাহক ব্যাংকের নিকট হতে পণ্যটি ক্রয় করবে।
(II) ব্যাংক গ্রাহকের জন্য নিজে পণ্য ক্রয় করবে এবং নিজ অধিকারে পণ্য নিয়ে আসবে।
(III) ব্যাংক পণ্যের ক্রয় মূল্যের সাথে তার নিজ খরচ যুক্ত করে গ্রাহকের নিকট মোট খরচ এবং মুনাফা যোগ করে তার পণ্যের মোট বিক্রয়মূল্য স্পষ্টভাবে ঘোষণা করবে এবং গ্রাহকের নিকট পণ্য হস্তান্তর করবে। গ্রাহক তাৎক্ষণিক অথবা নির্দিষ্ট মেয়াদের ভিতর পণ্যের মূল্য পরিশোধ করবে।
একটি উদাহরণের মাধ্যমে বাই মুরাবাহা পদ্ধতি ব্যাখ্যা করা হলো। ধরুন আপনি পাথরের ব্যবসা করেন। আপনি পাথর ক্রয় করে স্টক করেন এবং বিভিন্ন সাইজের পাথর তৈরি করে বিক্রয় করেন। এখন আপনি ১০ লক্ষ টাকার পাথর ক্রয় করতে চান এবং এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকে বিনিয়োগের জন্য গেলেন। ইসলামী ব্যাংক যারা পাথর উত্তোলন করে, অর্থাৎ প্রাথমিক উৎপাদনকারীকে ১০ লক্ষ টাকা প্রদান করবে। এরপর ইসলামী ব্যাংক নিজে অথবা তার প্রতিনিধির মাধ্যমে পাথর উত্তোলনকারীদের নিকট হতে পাথর বুঝে নেবে এবং আপনার নিকট ১১ লক্ষ টাকার (ধরে নেয়া হলো) বিনিময়ে নির্দিষ্ট মেয়াদে পরিশোধ স্বাপেক্ষে পাথর বিক্রয় করবে।
যদি আপনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাথরের মূল্য ব্যাংককে পরিশোধ করতে না পারেন, তবে ব্যাংক কারণ অনুসন্ধান করে আপনাকে জরিমানা করতে পারে। কিন্তু এই জরিমানার অর্থ কোনভাবেই চক্রবৃদ্ধি হয়ে মূলধন বাড়াবে না। আবার জরিমানার অর্থ শরীয়াহ এর দৃষ্টিকোণ হতে সন্দেহজনক হওয়ায় এটি ব্যাংকের আয়ের হিসাবে না এসে জনকল্যাণমূলক তহবিলে চলে যাবে, যা পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ না করলে হয় না, সেটি হলো বাই মুরাবাহা পদ্ধতিতে পণ্যের মূল্য একবারই নির্ধারণ করা যায়। কোনভাবেই একাধিকবার নির্ধারণ করা যায় না। তাই নির্ধারিত সময়ের পর জরিমানা করা হলে সেই জরিমানার অর্থ কোনভাবেই ব্যাংকের আয়ের হিসাবে আসবে না।
এখন সুদী ব্যাংকের মাধ্যমে সিসি লোনের সাহায্যে আপনি ১০ লক্ষ টাকার পাথর ক্রয় করতে পারবেন। আবার ইচ্ছে করলে ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে পাথর ক্রয় না করে বিদেশ ভ্রমণ করতেও পারেন। কারণ সুদী ব্যাংক আপনাকে জামানত রেখেই সিসি লোন ইস্যু করেছে। আপনি সময়মত ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে চক্রবৃদ্ধি সুদসহ মূলধন বাড়তে থাকবে তথা ব্যাংকের আয় বাড়তে থাকে এবং এক পর্যায়ে গ্রাহক দেউলিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আপনি সাদা চোখে দেখছেন ইসলামী ব্যাংক এবং সুদী ব্যাংক উভয় ব্যাংক হতে ১০ লক্ষ টাকার পাথর ক্রয় করা যায়।
কিন্তু উভয় পদ্ধতির বিনিয়োগের মধ্যে পার্থক্য থাকে। এই পার্থক্যগুলো হলো -
(I) ইসলামী ব্যাংক আপনাকে পাথরের ব্যবসা করতে বাধ্য করে, কিন্তু সুদী ব্যাংকের সিসি লোন এর অর্থ পাথরের ব্যবসা ছাড়া অন্য কোন অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় হতে পারে।
(II) ইসলামী ব্যাংক তারা মুনাফা ১ লক্ষ নির্ধারণ করে গ্রাহককে ১১ লক্ষ টাকা পরিশোধের কথা বলে, তবে সেই ১১ লক্ষ টাকার আর কোন বৃদ্ধি ঘটবে না। কিন্তু সুদী ব্যাংকে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ যোগ হয়ে ১১ লক্ষ টাকা আরো অনেক বেশি বৃদ্ধি পেতে পারে।
(III) অর্থ পরিশোধের সময়সীমা অতিক্রম করলে ইসলামী ব্যাংক জরিমানা করতে পারে। কিন্তু জরিমানার অর্থ ইসলামী ব্যাংকের আয়ে যোগ হয় না। এটি সওয়াবের নিয়ত ছাড়াই জনকল্যাণমূলক ফান্ডে চলে যায়। ইসলামী অর্থনীতি হলো ইসলামী জীবন ব্যবস্থার একটি অংশ। যখন মানুষ ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হবে, তখন দেখা যাবে যে, মেয়াদ উত্তির্ণ হওয়ার কারণে ব্যাংকের জরিমানা করার কোন প্রয়োজন থাকে না। অর্থাৎ উপযুক্ত কোন কারণে গ্রাহকের মেয়াদ উত্তির্ণ হয়েছে, যেখানে গ্রাহকের কোন হাত নেই। এসব ক্ষেত্রে কোরআনের ভাষ্য অনুয়ায়ী গ্রাহক আরো কিছু সময় পেতে পারে।
অন্যদিকে মেয়াদ উত্তির্ণ হওয়ার সাথে সাথে সুদী ব্যাংকে চক্রবৃদ্ধি সুদের কারণে মূলধনের পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং এতে ব্যাংকের আয়ের পরিমাণও বাড়তে থাকে।
বাই মুরাবাহা হতে অনেকের মনে প্রশ্ন সৃষ্টি হতে পারে, বাকীতে মূল্য বৃদ্ধি করা শরীয়াহভিত্তিক কিনা ? এ বিষয়ে রাসুল (সাঃ) এর স্পষ্ট হাদীস আছে। হাদীসটি হলো আয়শা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন “রাসুল (সাঃ) এক ইয়াহুদীর নিকট হতে নির্দিষ্ট মেয়াদে মূল্য পরিশোধের শর্তে খাদ্য ক্রয় করেন এবং নিজের লোহার বর্ম বন্ধক রাখেন” (সহীহ বুখারী, ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়)। তাছাড়া ঈমামগণ বাকীতে অধিক মূল্য পরিশোধ করা বৈধ বলেছেন।
ইসলামী ব্যাংকসমূহ তাদের বিনিয়োগের একটি বড় অংশ বাই মুরাবাহা পদ্ধতিতে করে থাকে। তবে জনগণের সচেতনতার অভাবে বাই মুরাবাহা পদ্ধতিতে বেশ কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়। যেমন উপরের উদাহরণে গ্রাহক প্রাথমিক উৎপাদনকারীর সাথে যোগসাজস করে পাথর ক্রয় না করে ১০ লক্ষ টাকা নগদ নিয়ে অন্যকোন প্রয়োজনে ব্যয় করতে পারে। এটি নিঃসন্দেহে শরীয়াহ এর লংঘন হবে এবং বিনিয়োগ কার্যক্রম সুদী ব্যাংকের অনুরূপ হয়ে যাবে। ব্যাংকের শরীয়াহ বোর্ডের অডিটে এ ধরনের লেনদেন দৃষ্টিগোচর হলে এখান হতে প্রাপ্ত মুনাফা সন্দেহযুক্ত হওয়ায় জনকল্যাণমূলক তহবিলে চলে যাবে। আবার ব্যাংক নিজ অধিকারে পণ্য না এনে যদি পণ্য সরাসরি গ্রাহকের নিকট চলে যায়, তবে শরীয়াহ লংঘন হবে। কারণ হলো পণ্য ক্রয়ের পর গ্রাহকের নিকট পৌছানোর পূর্ব পর্যন্ত ঝুঁকি ব্যাংককে বহন করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে অর্থাৎ পণ্য গ্রাহককে পৌছানোর পূর্বে যদি পণ্যের কোন ক্ষতি হয়, তবে ব্যাংকের সেই ক্ষতি বহন করতে হবে। কিন্তু ব্যাংক যদি সেই ঝুঁকি গ্রহণ না করে তবে বাই মুরাবাহাতে শরীয়াহ লংঘন হবে।
(৩) বাই মুয়াজ্জলঃ বাই মুয়াজ্জল অনেকটা বাই মুরাবাহার মত। তবে কিছুটা পার্থক্য আছে। আর সেটি হলো বাই মুয়াজ্জলে ব্যাংক গ্রাহককে পণ্যের ক্রয় মূল্য কত, তা বলে না এবং গ্রাহক ব্যাংকের নির্ধারিত মূল্য অবশ্যই বাকীতে পরিশোধ করবে। সোজা কথা হলো বাই মুরাবাহা নগদে বা বাকীতে হতে পারে এবং এখানে গ্রাহক ব্যাংকের মুনাফা কত হবে, তা সম্পর্কে জ্ঞাত থাকে। কিন্তু বাই মুয়াজ্জল অবশ্যই বাকীতে হতে হবে এবং ব্যাংকের মুনাফা কত হবে, সে সম্পর্কে গ্রাহত জ্ঞাত থাকে না। বাই মুরাবাহাতে ব্যাংকের মুনাফা নির্ধারিত থাকে কিন্তু বাই মুয়াজ্জলে মুনাফা অজ্ঞাত থাকে। বাই মুরাবাহার মতই বাই মুয়াজ্জলেও ব্যাংক কর্মকর্তার দূর্বলতা এবং গ্রাহকের ভিন্ন উদ্দেশ্যর কারণে শরীয়াহ লংঘন হতে পারে।
(৪) বাই সালামঃ বাই সালাম হলো অগ্রিক ক্রয় পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ব্যাংক গ্রাহকের নিকট পণ্য ক্রয়ের জন্য অগ্রিম মূল্য প্রদান করে থাকে। যেমন একজন কৃষককে ব্যাংক ১০০০ টাকা অগ্রিম প্রদান করল এবং বলল ৫ মাস পর ২ মণ আলু ব্যাংককে প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে আলুর পরিমাণ, গুণাগুণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। যদি পণ্যের পরিমাণ, গুণাগুণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ না থাকে, তবে বাই সালাম এর মাধ্যমে লেনদের বৈধ হবে না।
বাস্তবক্ষেত্রে পণ্য রপ্তানিতে বাই সালাম এর প্রাকটিস হয়। যেমন ধরুন কোন গার্মেন্টস ফেক্টরির মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক ৫০ লক্ষ টাকার মোট ১০ হাজার পিস টি শার্ট আগামী ৩ মাসের মধ্যে রপ্তানির অর্ডার গ্রহণ করল। এখন ইসলামী ব্যাংক ঐ গার্মেন্টস ফেক্টরিকে ১০ হাজার পিস টি শার্ট এর জন্য অগ্রিম ৪৯ লক্ষ টাকা পরিশোধ করল এবং বলল পণ্য ৩ মাসের মধ্যে সরবরাহ করতে হবে। অর্থাৎ ইসলামী ব্যাংক গার্মেন্টস ফেক্টরি হতে অগ্রিম ৪৯ লক্ষ টাকার টি শার্ট ক্রয় করে বিদেশি কোম্পানির নিকট ৫০ লক্ষ টাকায় রপ্তানি করে ১ লক্ষ টাকা মুনাফা করল।
(৫) মুশারাকাঃ মুশারাকা হলো অংশীদারের ভিত্তিতে ব্যবসা করা। এই পদ্ধতিতে ব্যাংক এবং বিনিয়োগ গ্রাহক উভয়ই মূলধন প্রদান করবে এবং চুক্তি অনুযায়ী মুনাফা বন্টন করবে। কিন্তু ক্ষতি হলে মূলধনের অনুপাতে ক্ষতি বহন করতে হবে। মুশরাকা হলো ইসলামী অর্থনীতির প্রাণ। কিন্তু জনগোষ্ঠির মধ্যে ঈমান, আখলাক, আমানতদারী, দক্ষতা, যোগ্যতা ইত্যাদির ঘাটতি থাকলে মুশারাকা পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করা কঠিন হয়ে যায়। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (IBBL) এর ২০১৯ সালে মুশারাকা পদ্ধতিতে বিনিয়োগ হয়েছে মাত্র ৫৮ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (IBBL) ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে মুশারাকা পদ্ধতিতে বিনিয়োগ কার্যক্রম শুরু করেছিল। কিন্তু একেবারে প্রথম দিকে হওয়ায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনাগত দূর্বলতা এবং বিনিয়োগ গ্রাহকদের প্রকৃত তথ্য প্রদানে অপারগতার কারণে মুশারাকা পদ্ধতিতে ব্যাংকের ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে থাকে। তাই ব্যাংক বর্তমানে মুশারাকা পদ্ধতিতে তুলনামূলকভাবে অনেক কম বিনিয়োগ করে থাকে। বরং ব্যাংক অংশীদারিত্বে না গিয়ে বিক্রেতা হিসেবে কাজ করে।
উল্লেখ্য যে, বিক্রেতা হিসেবে কাজ করলে ব্যাংকের মুনাফা নিশ্চিত থাকে। একটু আগেই বলা হয়েছে ইসলামী অর্থনীতি হলো ইসলামী জীবন ব্যবস্থার একটি অংশ। যখন মানুষ ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হবে, তখনই ব্যাংক মুশারাকার মত অংশীদারিত্বে বিনিয়োগ বাড়াতে পারবে।
(৬) মুদারাবাঃ ব্যাংক যখন মুদারাবা পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করে তখন ব্যাংক হয় ‘সাহিব আল মাল’ অর্থাৎ মূলধন সরবরাহকারী। অন্যদিকে গ্রাহক হয় ‘মুদারিব’ অর্থাৎ যে ব্যাংক হতে মূলধন গ্রহণ করে তার শ্রম ও দক্ষতার এবং যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে ব্যবসা করে। এই পদ্ধতিতে চুক্তি অনুযায়ী মুনাফা বন্টন করবে। কিন্তু ক্ষতি হলে ‘সাহিব আল মাল’ হিসেবে ব্যাংককে ক্ষতি বহন করতে হবে। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (IBBL) এর ২০১৯ সালে মুদারাবা পদ্ধতিতে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৪৭০ কোটি টাকা।
(৭) হায়ার পারচেজ আন্ডার শিরকাতুল মিল্কঃ এ পদ্ধতিতে ব্যাংক ও বিনিয়োগ গ্রাহক উভয়ই যৌথভাবে সম্পদের মালিকানা অর্জন করবে। এরপর ব্যাংকের অংশ গ্রাহককে ভাড়া দেয়া হবে এবং একইসাথে গ্রাহক ব্যাংকের অংশ কিস্তিতে ক্রয় করে ফেলবে। উল্লেখ্য যে গ্রাহক ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধের সাথে সাথে ব্যাংকের মালিকানা কমতে থাবে এবং গ্রাহকের মালিকানা বাড়তে থাকবে। ফলে ভাড়ার পরিমাণও কমতে থাকবে। একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের পর গ্রাহক সম্পূর্ণ সম্পদের মালিক হয়ে যাবে।
ধরুন, একটি বাড়ি নির্মাণের জন্য আপনি ৪০ লক্ষ টাকা এবং ইসলামী ব্যাংক ৬০ লক্ষ টাকা ব্যয় করেছে। তাহলে ব্যাংক ঐ বাড়ির ৬০% এর মালিক। এখন ব্যাংক তার অংশের জন্য মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করল ১০ হাজার টাকা এবং আপনি ৬০ লক্ষ টাকা পরিশোধ করে বাড়ির পুরো মালিকানা নিয়ে যাবেন। প্রতি মাসের কিস্তিতে বাড়ির মূল্য পরিশোধের জন্য ধরা হলো ৫০ হাজার টাকা। অতএব মাসিক কিস্তি হবে (১০ + ৫০) = ৬০ হাজার টাকা। উল্লেখ্য যে, যতই কিস্তি পরিশোধ করা হবে, ততই বাড়ির মালিকানায় ব্যাংকের অংশ কমতে থাকবে এবং গ্রাহকের অংশ বাড়তে থাকবে। তাই কিস্তি ৬০ হাজার টাকা হতে বাড়ি ভাড়া ১০ হাজার টাকা ক্রমান্বয়ে কমে আসবে এবং কমে আসা অংশটি বাড়ির মূল্য পরিশোধের সাথে যুক্ত হবে। ফলে ১০ বছরের কম সময়ের মধ্যে গ্রাহক বাড়ির সম্পূর্ণ মালিকানা পেয়ে যাবে।
(৮) কর্জঃ ইসলামী ব্যাংক গ্রাহকদেরকে কর্জ (ঋণ) প্রদান করে থাকে। কর্জের বিনিময়ে ইসলামী ব্যাংক কোন ধরনের অতিরিক্ত কিছুই গ্রহণ করে না। তবে কর্জ নেয়ার জন্য গ্রাহকের উপযুক্ত জামানত থাকতে হবে। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (IBBL) ২০১৯ সালে প্রায় ৩৩৫০ কোটি টাকা কর্জ প্রদান করেছে।
(৯) ইসলামী ব্যাংক এবং সুদী ব্যাংকের বিনিয়োগের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো নগদ অর্থ। ইসলামী ব্যাংক কোন নগদ অর্থ প্রদান করে না কিন্তু সুদী ব্যাংক সিসি লোনের দ্বারা গ্রাহকের একাউন্টে নগদ অর্থ প্রদান করে। এর ফলে অর্থনীতিতে নিম্নোক্ত প্রভাব পড়তে পারে -
(ক) ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ উৎপাদনশীল খাতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কারণ ইসলামী ব্যাংক সরাসরি নগদ অর্থ প্রদান না করে বিনিয়োগ দ্রব্য ক্রয় করে গ্রাহকের নিকট দ্রব্য পৌছিয়ে দেয় অথবা গ্রাহকের সাথে মালিকানায় অংশগ্রহণ করে। কিন্তু সুদী ব্যাংক গ্রাহকের নামে ৫ কোটি টাকা সিসি লোন প্রদান করে তার দায়িত্ব শেষ করে। গ্রাহক এই ৫ কোটি টাকা নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় করতে পারে, আবার অন্য খাতেও ব্যয় করতে পারে। এমনকি গ্রাহক এই অর্থ সম্পূর্ণ অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করতে পারে। ফলে গ্রাহকের ঋণ খেলাপি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং চক্রবৃদ্ধি সুদের মাধ্যমে গ্রাহক দেউলিয়া হয়ে গেলে তার জামানত ব্যাংকের দখলে চলে যায়।
(খ) ইসলামী ব্যাংকিং এর জন্য ব্যাংক কর্মকর্তা এবং গ্রাহকের মধ্যে সততা, ন্যায়পরায়ণতা, আমানতদারী থাকতে হবে। যদি এর ঘাটতি থাকে, তবে সুদি ব্যাংকে সিসি লোন যেভাবে নগদ উঠিয়ে অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করা সম্ভব, ঠিক একইভাবে ইসলামী ব্যাংকেও গ্রাহক নগদ টাকা গ্রহণ করতে পারবে। তবে পদ্ধতিগত পার্থক্য থাকার কারণে ইসলামী ব্যাংকে নগদ অর্থ উঠানো বেশ কঠিন কাজ। তাছাড়া শরীয়াহ অডিটে বিষয়টি ধরা পড়লে এর মুনাফা ব্যাংকের আয়ের হিসাবে যায় না, বরং জনকল্যাণমূলক তহবিলে চলে যায়। অবশ্য ইসলামী ব্যাংক বিক্রেতা না হয়ে অংশীদার হলে নগদ অর্থ ব্যাংক হতে বিনিয়োগ গ্রাহকের হাতে যাওয়া দোষণীয় নয়।
(গ) ইসলামী ব্যাংকের যে সমস্ত কর্মকর্তা এবং গ্রাহকরা ইসলামী ব্যাংকের নীতিমালার বাইরে গিয়ে শরীয়াহ লংঘন করেন এবং শরীয়াহ লংঘনের কারণে ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম সমালোচিত হচ্ছে এবং বলা হচ্ছে ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম এবং সুদী ব্যাংকের কার্যক্রম একই, তাদের জন্য রাসুল (সা.) এর বক্তব্য হলো, “সুদখোর, সুদদাতা, এর স্বাক্ষী এবং সুদের হিসাব / দলীল লেখক সবাই সমান অপরাধী”। হাদীসটি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত এবং ‘আবু দাউদ শরীফে’ ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়ে আছে। অর্থাৎ ইসলামী ব্যাংকে চাকুরি করা সত্ত্বেও ব্যাংকের কর্মকর্তারা স্বজ্ঞানে শরীয়াহ লংঘনের কারণে সুদের হিসাব বা দলীল লেখক হিসাবে সমান অপরাধী হবেন এবং জাহান্নামের দিকে ধাবিত হবেন। (চলবে..............)
লেখক,
আকমল হোসাইন,
সহযোগী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ,
মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ, মৌলভীবাজার।


- একটি শক্তি ক্ষমতায় থাকার জন্য নতুন নতুন পন্থা বের করছে: আমীর খসরু
- আওয়ামী লীগকে কোনো দিন রাজনৈতিকভাবে দাঁড়াতে দেব না: উপদেষ্টা মাহফুজ
- আমেরিকা ভুল করলে ইরান পারমাণবিক অস্ত্রের দিকে এগিয়ে যাবে: ড. লারিজানি
- গরীবের ডাক্তার খ্যাত কানাইঘাটের ডা. মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আর নেই
- এমএসথ্রি টেকনোলজি বিডি পরিবারের ঈদ শুভেচ্ছা
- সুনামগঞ্জে যাত্রীবাহী নৌকাডুবির ঘটনায় ৪ জনের মৃত্যু
- মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে; ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে
- বাংলাদেশেও বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে: ফায়ার সার্ভিসের সতর্কবার্তা
- খনিজ চুক্তিতে কী আছে, অবশেষে ইউক্রেন কি মার্কিন উপনিবেশে পরিণত হচ্ছে?
- হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্যে ‘কিছুটা দ্বিমত’ জানিয়ে সারজিসের পোস্ট

- খনিজ চুক্তিতে কী আছে, অবশেষে ইউক্রেন কি মার্কিন উপনিবেশে পরিণত হচ্ছে?
- হত্যা-লুটপাটে জড়িত নয় এমন নেতৃত্বে আ.লীগের রাজনীতিতে বাধা নেই: রিজভী
- ক্যান্সারের কারণ ও প্রতিকার এবং বাস্তবতা
- সিলেটের জন্য যে ‘সুখবর’ দিলেন উপদেষ্টা ফরিদা
- ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে
- গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে আবারও যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো
- বিশ্ব শিশু দিবসে বাকায়ির টুইট: ইহুদিবাদী ইসরাইলের হাতে গাজার ১৭ হাজার শিশু নিহত
- মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি রোভার স্কাউট গ্রুপের ‘সপ্তম বার্ষিক ক্যাম্প’ সম্পন্ন
- দুই মাস বাড়ল সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা
- ২০২৫ সাল নাগাদ সরকারি নির্মাণে পোড়া ইট ব্যবহার বন্ধ হবে : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান