শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কিভাবে সম্পর্কিত?

জুলাই ১১, ২০২০ ২০:৩১ Asia/Dhaka

ড. মোঃ জাহিদুল ইসলাম:: বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য-সচেতনতার বিষয়টি বর্তমানে ব্যাপক আলোচ্য। বিশেষ করে করোনা ভাইরাস মহামারীর সংক্রমন বিশ্ববাসিকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়টিকে নতুনভাবে বা সমন্বিত ভাবে চিন্তা করতে আগ্রহী করেছে। বাঁচতে হলে জানতে হবে এ বিষয়টি মানুষ মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছে।

আদিম যুগে, যখন, মানুষকে প্রকৃতির সাথে যুঝে বেঁচে থাকতে হতো, তখন থেকে মানুষকে বেঁচে থাকার কৌশল বা টিকে থাকার কায়দা আয়ত্ব করতে হয়েছে। এমনকি, এখনও, গভীর অরণ্যে বা দূর্গম পাহাড়ে আদিবাসী বা উপজাতিদের জীবন ধারন অনেকাংশে নির্ভর করে তারা প্রকৃতিকে কিভাবে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে আপন করে নিচ্ছে তার উপর।

সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে মানুষের জীবন অনেক ক্ষেত্রেই সহজ হয়েছে। খাদ্যের সহজলভ্যতা, চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন,ঔষধ শিল্পের বিকাশ মানুষকে দীর্ঘায়ু করছে। যে রোগগুলো পূর্বে অসংখ্য লোকের জীবন কেড়ে নিত ( ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, বসন্ত) সেগুলোর প্রোকপ আজ ¤্রয়িমান। সার্বিক স্বাস্থ্য সেবায় এ উন্নতির জন্য যে কারনগুলো রয়েছে তার অন্যতম হলো স্বাস্থ্যশিক্ষা এবং গবেষনা। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা পারস্পরিক ভাবে কতটা সম্পর্কিত সেটার অন্যতম প্রমান হতে পারে বাংলাদেশ। নারীশিক্ষা বৃদ্ধির সাথে প্রসুতি মৃত্যুর হার কমে আসা, বাল্যবিবাহ রোধ এবং শিশু মৃত্যুর হারের হ্রাস অনেকটা সম্পর্কিত বলে অনেক বিশেষজ্ঞই মত দেন। যদিও স্বাস্থ্য-সেবার উন্নয়নও এক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে।  

অন্যদিকে, সভ্যতার উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ঝুুঁকির ধরণ ও মাত্রার ভিন্নতা লক্ষ্যনীয়। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে স্বাস্থ্য সেবার অপ্রতুলতা, বৈশিক উষ্ণতায় প্রকৃতির বৈরিতায় জনস্বাস্থ্যে ঝুঁকি তৈরি, গবেষনার কমতিতে বিভিন্ন পরিসরে জনস্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে, আমাদের মত দেশে, যেখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশি, সেখানে চ্যালেঞ্জও বেশি। 

শিশুকাল থেকেই আমাদের পরিবার থেকে স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষা দেয়া হয়। যেমন: নিয়মিত সুষম খাদ্য ও পানি  গ্রহণ, পরিস্কার পরিছন্নতা বজায় রাখা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়া। এ সমস্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্য জ্ঞান পরবর্তিতে স্বাস্থ্যকর জীবন গঠনে সাহায্য করে। তবে, পরিবারে যদি প্রয়োজনীয় শিক্ষার কমতি অর্থাৎ স্বাস্থ্য-সচেতনতা না তৈরি হয়, সেক্ষেত্রে, পরিবারের বয়ঃকনিষ্ট সদস্যদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এ পর্যায়ে তৈরি হয় প্রাতিষ্ঠানিক বা রাষ্ট্র-প্রদত্ত স্বাস্থ্য তথ্য ও শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা। যে প্রক্রিয়ায় স্বাস্থ্য-সচেতন হতে স্বাস্থ্যবান নাগরিগসমাজ গড়ে ওঠে।

পরিবারের পর শিশু বিদ্যালয় থেকে সাধারন শিক্ষার সাথে স্বাস্থ্যশিক্ষা অর্জন করে। শিক্ষক এবং বিভিন্ন শিক্ষা-উপকরনের মধ্য দিয়ে তারা এ ধরনের জ্ঞান ধারন করে। শিক্ষক ও শিক্ষা-উপকরনের অপ্রতুলতা শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যজ্ঞান থেকে পিছিয়ে রাখতে পারে। শিক্ষককে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান গুলোর সাথে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান গুলোর পারস্পরিক যোগাযোগ শিক্ষা-প্রতিষ্টানগুলোকে সাধারন শিক্ষার সাথে স্বাস্থ্যশিক্ষায় এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এ ধরনের উদ্যোগ যে নেই তা বলা যায় না, তবে এর পরিধি আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নতুন জ্ঞান আরোহন জরুরী। জ্ঞান-ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা, সংবাদ পত্র, রেডিও, টেলিভিশন, গ্রন্থ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এর সহায়তায় একজন সচেতন নাগরিক সহজেই স্বাস্থ্যজ্ঞান সম্পন্ন হতে পারে। যা তার নিজের জন্য ও তার পরিবারের জন্য আবশ্যিক।
বিভিন্ন গবেষণায় প্রমানিত, শিক্ষার সাথে স্বাস্থ্যের নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। শিক্ষা অর্জনের সাথে সাথে মানুষ সচেতন হয়, যার মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা অন্যতম। শিক্ষা পরিবর্তীত পরিবেশের সাথে নিজেকে অভিযোজনের দক্ষতা অর্জন করতে সাহায্য করে। পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্র যারা শিক্ষায় এগিয়ে তাদের নাগরিক সমাজ তুলনামুলকভাবে স্বাস্থ্যবান, একই সাথে স্বাস্থ্য-ব্যবস্থাপনার বিবেচনায় তারা সেরা। শিক্ষা মানুষকে কর্মসংস্থান ও উন্নত স্বাস্থ্যকর জীবনের দিকে ধাবিত করে। সাধারন ভাবে যে সকল দেশ উন্নত শিক্ষা ও গবেষণার দিক থেকে এগিয়ে তারা উন্নত কর্মসংস্থান, মাথাপিছু আয়, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা এককথায় জীবনযাত্রার মানের দিক থেকেও উপরের সারিতে। ব্যাক্তি জীবনেও এই কার্যকরনের ভিন্নতা খুব কম লক্ষনীয়।

পৃথিবীতে এখনও কিছু ব্যাধি আছে, যা দুরারোগ্য। কিছু রোগের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার তুলনামুলক বেশি। এ ক্ষেত্রে, নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি প্রণয়ন বা ঔষধ আবিস্কারে শিক্ষা ও গবেষনার বিকল্প নেই। এছাড়াও, পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অনুজীব ( যেমন: করোনা ভাইরাস) জন জীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে। এ ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা সহ জ্ঞান বা শিক্ষা প্রয়োজন। সরকারের বিভিন্ন বিভাগকে (যেমন : স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থ, স্বরাষ্ট্র, তথ্য-প্রযুক্তি, পরিসংখ্যান ) সমন্বিত ভাবে কাজ করতে হয়। এক্ষেত্রে, প্রত্যেকটি বিভাগকে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সক্ষমতা অর্জন করতে হয়। যা হটাৎ করে সম্বভ নয়। বিভিন্ন বিভাগ ও বৈশ্বিক শিক্ষার পারস্পরিক লেনদেনের মাধ্যমে আমরা এ ধরনের সক্ষমতা অর্জন করতে সক্ষম হবো। পরিবার থেকে শুরু করে বিদ্যালয়, মিডিয়া, বিভিন্ন সামাজিকীকরন উপকরনের মাধ্যমে আমাদেরকে প্রয়োজনয়ি শিক্ষা, তথ্য সংগ্রহ করে সচেতন হতে হবে। উচ্চ শিক্ষার স্থানগুলোকে সমাজঘনিষ্ট হয়ে স্বাস্থ্যরক্ষায় প্রয়োজনীয় নতুন তথ্য আহোরন, তত্ত¡ বিনির্মানে অগ্রগামী হতে হবে। মোদ্দাকথা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমন্বয় আবশ্যক।

লেখক,
ড. মোঃ জাহিদুল ইসলাম
সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, লক্ষীপুর সরকারি কলেজ, লক্ষীপুর ।
e-mail: jahidsimu@gmail.com