`

পশ্চিমা বিশ্ব ও আমরা

  • Views: 4041
  • Share:
জুলাই ৮, ২০২০ ২৩:৩৫ Asia/Dhaka

নুরুজ্জামান বিশ্বাস, কানাডা:: আমদের দেশের কিছু মানুষ কেন যেন পশ্চিমা বিশ্বের মানুষ ও তাঁদের যাপিত জীবন সম্পর্কে ভাল ধারনা পোষণ করেন না। পশ্চিমা দুনিয়া সম্পর্কে আমাদের দেশের কিছু মানুষের কিছু কিছু ধারনাকে মাঝে মাঝে শুধু ভূলই মনে হয় না, পাগলের প্রলাপ বলে মনে হয়।

 অজ্ঞতা ও কিছু সামাজিক রীতি নীতির কারনে, আমাদের দেশের কিছু মানুষ পশ্চিমা সমাজকে আমাদের সমাজ থেকে আলাদা চোখে দেখে। বিশেষ করে, বৃদ্ধা আশ্রম(old home), বাচ্চা কোলে না নিয়ে না স্টলারে নিয়ে চলা ফেরা করা, ছোট বেলা থেকে আলাদা বিছানায় রাখা, বাচ্চাকে ‘ডে কেয়ার’ এ রাখা, কুকুরকে সঙ্গী হিসেবে পালন করা। ঘন ঘন জব পরিবর্তন করা ইত্যাদি। শৈশব,কৈশোর ও কর্মজীবনের ৩৪ বছর বাংলাদেশে কাটিয়েছি,২০১১ থেকে পচ্চিমা দেশে আছি। সকল নাগরিক সুবিধা ভোগ করছি। দেশে নিন্ম আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ আয়ের অনেকের জীবন যাপন খুব কাছ থেকে দেখেছি। তাই পার্থক্যটা সহজেই বুঝতে পারছি।

পশ্চিমা বিশ্বে জন্মের পর একটা বাচ্চাকে আলাদা বিছানায় রাখা হয়, মায়ের বুকে ঘুম পড়ানো হয় না- কথাটা শতভাগ সঠিক না। দুনিয়ার সকল মা-ই তার নাড়ী ছেড়া ধন সন্তানের শুভ কামনায় সর্বদা নিবেদিত প্রাণ। পশ্চিমারা সন্তানদেরকে একটা নি্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত যে বিশেষ বিছানায় রাখেন তা শতভাগ স্বাস্থ্যসম্মত, বৈজ্ঞানিক ও নিরাপদ। সন্তান পৃথিবীতে আগমনের পর একজন মায়ের বিশেষ বিশ্রামের প্রয়োজন হয়।বাচ্চাকে পাশে বা সাথে নিয়ে ঘুমালে, অচেতন অবস্থায় যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রত্যেক মা-ই তার সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহন করে আত্মতৃপ্ত লাভ করেন। এক্ষেত্রে সাদা-কালো, ধনী-গরীব সকল মা ই সন্তানের ভালবাসার সুতিকাঘর। 

পশ্চিমা বিশ্বে, সাধারনত একজন মা সন্তান জন্মের পর ২ বছর মাতৃত্ব কালীন ছুটি ভোগ করেন। বাচ্চা জন্মের পর সরকারের পক্ষ থেকে তার মায়ের ব্যাংক একাউনটে তার ভরণ পোষনের খরচ পৌঁছে যায় । মা কাজে যোগ দিলে, বাচ্চাকে ‘ডে কেয়ারে’ রাখা হয়। ডে কেয়ারের প্রত্যেক ‘কেয়ার গিভার’ ই উচ্চ শিক্ষিত এবং সংশ্লিষ্ট কাজে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। ডে কেয়ার গুলো রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোশকতায় নিয়মিত তদারকি করা হয়। কোন ধরনের অনিয়ম পেলে সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। অনিয়মের সত্যতা পেলে সংশ্লিষ্ট কেয়ার গিভারের সনদ বাতিল করা হয় এবং সনদ বাতিল হলে তিনি আর এ সেক্টরে কাজ করতে পারেন না। আর এ ভয় থেকে কেউ ই অনিয়ম করার সাহস করে না।

 ডে কেয়ারে বয়স বেধে প্রত্যেক বাচ্চার জন্য সরকারী ভাবে দৈনিক ৪০ থেকে ১০০ ডলার বরাদ্ধ থাকে। যেখানে এক সাথে ৩০ থেকে ১০০ জন বাচ্চা থাকে। বয়স বেধে প্রতি ৩ থেকে ৮ জন বাচ্চার জন্য এক জন কেয়ার গিভার থাকে । এখান থেকে একজন বাচ্চা অন্যদের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার অভ্যাস গড়ে তোলে। বাচ্চার সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। অন্যের পছন্দ অপছন্দের মুল্য দিতে শিখে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে এখান থেকে সচেতন হয়ে উঠে। নিজের কাজ নিজে করতে অভ্যস্থ হয়।

ডে কেয়ার গুলো সর্বদা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে থাকার কারনে বাচ্চাদেরকে কেউ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন (চাইল্ড অ্যাবিউস )করার সাহস পায় না। একজন বাচ্চা ওয়াশ রুম ব্যবহার করা থেকে শুরু করে দৈনিন্দন জীবনের সাধারন ‘ম্যানার’স গুলো এখান থেকে শিখে থাকে। তাইতো, পশ্চিমা বিশ্বে এক জন বাচ্চাকে দিয়ে সহজে মিথ্যা বলাতে পারবেন না।

এবার আমাদের দেশের প্রসঙ্গে আসি। আমাদের দেশে বাচ্চাগুলোকে বেশির ভাগক্ষেত্রে জন্মের পর মায়েরা ‘বুয়ার’ কাছে রেখে লালন পালন করেন(তবে ব্যতিক্রম আছে এবং তা খুব কম)।যাদের বেশীর ভাগেরই এ সংক্রান্ত কোন শিক্ষাগতযোগ্যতা নেই। দেশে মজা করে এখন অনেকে বলে থাকেন, ‘বন্যেরা বনে সুন্দর,শিশুরা বুয়ার কোলে’। জন্মের পর থেকে ভেজাল খাওয়ানোতে অভ্যাস করা হয়(যেমনঃমেলামাইন মিশ্রিত গুড়ো দুধ)। বাচ্চাকে স্টলার না দিয়ে কোলে বা বুকের সাথে রেখে বাইরে বের হতে হয়। বাবা মা বা ২ /১ জন নিকট আত্মীয় ছাড়া বাচ্চারা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে তাদের দ্বারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। বাচ্চা কোলে নিয়ে বাইরে বের হওয়া কিন্তু নিরাপদ না। যে কোন সময় পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিকৃত রুচির কিছু মানুষ বাচ্চাদেরকে কোলে নিয়ে গোপন অঙ্গে হাত দিতে দ্বিধা করে না। বাচ্চারা অনেক সময় অনেকের কাছে যেতে চায় না। কারণটা কোন শিশু বিশেষজ্ঞ’র কাছ থেকে জেনে নেয়ার অনুরোধ রইল। যারা শিশুদের নিয়ে কাজ করেন তাঁদের কাছ থেকে তথ্য জানলে অবাক হবেন,আমাদের দেশে শতকরা কতজন শিশু এই বুকের সাথে বা কোলে নেয়া থেকে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। তবে মা বাবার বুক সন্তানের জন্য পৃথিবীতে সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা- একথা চরম সত্য।

 আামাদের দেশের মায়েরা একজন বাচ্চাকে সেবা যত্ন করার নামে বাচ্চাকে অর্ধমৃত করে রাখেন। অনেক মা বাবা কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সন্তানকে নিয়ে গর্ভের সাথে বলেন আমার বাচ্চা গ্লাসে পানি ঢেলে খেতে পারে না, গোসল এর পর কাপড়টা অন্যকে ধুয়ে দিতে হয়। এ রকম পরনির্ভরতা একজন মানুষের জীবনকে পঙ্গু করে দেয়।আমাদের দেশে প্রাইমারি স্কুল থেকে একজন বাচ্চা সূদের হার,দুধে পানি মিশানো, অন্যকে ঠকানোর অনেক কৌশল শিখে থাকে।বাচ্চাকে শিখানো হয় “নিজের খাবার বিলিয়ে দিবে অনাহারীর তরে”- অথচ বন্ধুর সাথে সামান্য খাবার ভাগাভাগি করে খেলে আর তা মা বাবা জানতে পারলে, বলে ফেলেন, “ আমি কি ......এর জন্য খাবার রান্না করেছিলাম?” শিখানো হয় ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে’- বাসা থেকে বলে দেয়া হয়, কোথাও গ্যাঞ্জাম দেখলে তার আশে পাশে ও যাবি না। এরকম হাজার টা উদাহরন দেয়া যায়। আমাদের দেশের স্কুল পড়ুয়া বাচ্চাকে ভবিষ্যতে কী হতে চায় জানতে চাইলে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হয়ে গ্রামের দরিদ্র মানুষের সেবা করার প্রতিজ্ঞা করে। বাস্তবটা আমরা সবাই জানি। পশ্চিমা বাচ্চারা আগেই বলে দেয় সে ডাক্তা্‌র ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বেশী ইনকাম করবে।যারা পশ্চিমাদের নিয়ে নাক ছিটকান দয়া করে তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে একটু খোজ খবর নিয়ে আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে মিলিয়ে দেখবেন।
 
পশ্চিমা বিশ্বে ১৮ বছরের আগ পর্যন্ত একটা বাচ্চার দায়িত্ব অনেকটা রাষ্ট্রের এবং সকল বাচ্চা সমান সুযোগ ভোগ করে। আমাদের দেশে, আমরা নিজের বাচ্চাকে মায়ের বুকে রেখে মানুষ করি আর অন্যের বাচ্চা, যার জন্ম দরিদ্র পরিবারে তাকে দিয়ে ইচ্ছে মত কাজ করাতে সংকোচ বোধ করি না। অনেক ক্ষেত্রে রাজন বা সামিউলদের মত পৃথিবী থেকে পরপারে পাঠিয়ে দিতে দ্বিধা করি না। রাজন বা সামিউলদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা পশ্চিমা দুনিয়ায় বিরল। অবাক হই যখন দেখি,ঠুনকো অপরাধে ১২ বছরের কোন বালকের হাতে হাত কড়া। পুলিশ ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি বিজয়ের বেশে পাশে দাড়িয়ে ছবি তুলে তা ফেইস বুকে দিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেন।
 
পশ্চিমা দুনিয়ায় ১৮ বছর পর থেকে কাজ করতে উৎসাহ দেয়া হয়। এর অর্থ এই নয় যে তাকে তল্পি তল্পাসহ বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়। পশ্চিমা দুনিয়ায় হাইস্কুল(১৮ বছরের আগেই শেষ হয়)পাশ করে এখানে যে জব পায় এবং আয় করে আমাদের দেশে সে পরিমান আয় করতে ৩০–৩৪ বছর অপেক্ষা করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে সে পরিমান আয় কখন ও সম্ভব না।আইনত পশ্চিমা দুনিয়ায় ১৮ বছরের আগে কেউ ধূমপান ও মদ পান করতে করতে পারে না এবং যেখানে সেখানে ড্রিঙ্কস করতে পারে না। বারে বা ক্লাবে যেতে হয়। আমাদের দেশের চিত্রটা নিয়ে সচেতন মহল মোটামুটি সংকিত।
 
পশ্চিমা দুনিয়ায় ১৮ বছরের পর প্রাপ্ত বয়স্ হলে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে নিজেরা নিজেদের জীবন সঙ্গী পছন্দ করে নেয়। অনেক ক্ষেত্রে পারিবারিক ভাবে বিয়ে শাদী হয়।আমাদের দেশের মত বাড়ীর ছাদে ফুল ভলিউমে সারা রাত মিউজিক বাজিয়ে- সুন্নাতে খতনা, জন্ম দিন,গায়ে হলুদ ওবিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে অন্যের ঘুম নষ্ট করা পচ্চিমা দুনিয়ায় অকল্পনীয়।
 
আামাদের দেশে একজন ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত হতে কমপক্ষে ২৮-৩৫ বছর সময় লাগে। অনেকে ছাত্র জীবনে কাউকে পছন্দ করলেও প্রতিষ্ঠার অভাবে একে অপরকে হারাতে হয়। যা আমাদের দেশের সাধারন ঘটনা। বিয়ের পর শুরু হয় " তোমার ঘরে বসত করে কয় জনা ও মন জান না”। জড়িয়ে পড়ে পরকীয়ায়্। গত কয়েক মাসের পত্রিকা দেখতে পারেন। মা অথবা বাবার পরকিয়ার কারনে কত জনের সংসার ভেঙেছে, কত জনের প্রান হানি ঘটেছে। পরকীয়ার কারণে বাবা মা কর্তৃক নিজ সন্তানের জীবন হানী আমাদের দেশে এখন সাধারন ঘটনা। আবার অনেক সময় দুরের কর্মস্থলে গিয়ে স্বামী – স্ত্রী দুজনে অবৈধ ভাবে নিজ নিজ জৈবিক প্রয়োজন মিটাচ্ছে আর মনে মনে একে অপরকে ঠকাচ্ছে ।পচ্চিমারা কিন্তু সহজে এ কাজটি করতে পারে না।দাম্পত্য জীবনে কার ও সাথে কোন কারনে বনি বনা না হলে, হাসি মুখে ‘বাই হানি’ বলে একে অপরের থেকে দূরে থাকে।
আমাদের দেশে একজন বাবা সন্তানের পিতা হবার পর হতে স্বপ্নের ডানায় দিনাতিপাত শুরু করে দেন। সন্তান বড় হয়ে সংসারের হাল ধরবে। বাবা- মা তখন আরাম করে সন্তানের সেবা যত্ন উপভো করবেন। বেশীর ভাগ
 
বাবা মা’ র স্বপ্ন তাদের সন্তান দ্বারা পুরন হয় না। স্বপ্ন থাকে বৃদ্ধ বয়সে নাতি নাত্নী নিয়ে আনন্দে সময় পার করবেন।। বাস্তবে হয়ত তাকে কোন বৃদ্ধা আস্রমে যেতে হয় যা তারা মন থেকে কিছুতে ই মেনে নিতে পারেন না। মানসিক ভাবে আঘাত পেয়ে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হন। আবার যাদের আর্থিক সংগতি নেই তারা হয়ত সন্তানের অবহেলায় বিনা চিকিৎসায় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন।
পচ্চিমা বিশ্বে, একজন বাবা মা তার সন্তানকে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাছে রাখেন। বিশেষ করে ১৮ পার হলে বাবা মা সন্তানের মতামতের প্রতি গুরুত্ব দেন। অনেকের ধারনা পচ্চিমা বিশ্বে ১৮ পার হলে সন্তান কে বাসা থেকে বের করে দেয়া হয় । এটা একটা বায়বীয় ধারনা। পচ্চিমা বিশ্বে অনেকের পারিবারিক বন্ধন আমাদের দেশের চেয়েও দৃঢ় ও মজবুত। কাজের সুবিধার কারণে অনেক সময় বাবা মা, সন্তান কে দাম্পত্য জীবনে তাদের মত থাকতে উৎসাহ দেন। তারা যেখানে থাকুক না কেন একে অপরের প্রতি ঠিকই যত্নশীল।
পচ্চিমা বিশ্বে বয়স ৬৫ + হয়ে গেলে, তাকে সিনিয়র সিটিজেন বলা হয়। পিছনের আয় অনুযায়ী বৃদ্ধ বয়সে সকলেই পেনসন উপভোগ করেন। এছাড়া ও রাষ্ট্র ও সমাজের অনেক সুবিধা ভোগ করে থাকেন। আগে থেকেই তিনি তার বৃদ্ধ বয়সের সময় কিভাবে পার করবেন তার একটা প্লান করে রাখেন। সে অনুযায়ী তার একটা সার্কেল তৈরি করেন। এমনকি মৃত্যুর পূর্বে তার সৎকারের খরচটা পরিশোধ করে যান। যেহেতু আগে থেকেই বৃদ্ধ বয়সে সময় পার করার প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। তাই বৃদ্ধাশ্রমে থাকলেও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন না।পচ্চিমা বিশ্বে ৭০ বছর বয়সেও সুন্দর করে সেজে গুজে পরিপাটি হয়ে ঘুর বেড়ান। ৮০ বছর বয়সে ইলট্রিক হুইল চেয়ারে বসে শপিং মলে যান। সমবয়সীদের সাথে আড্ডা মারেন। কল করলে হুইল ট্রেন এসে গন্তব্যে নিয়ে যায়। পাব্লিক ট্রান্সপোর্ট এ উঠতে চাইলে আছে বিশেষ সুবিধা। আমাদের দেশে ঐ বয়সে বাইরে বের হতে হলে কারও সাহায্য ছাড়া সম্ভব না। পালিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার অনেকটা অকপ্লণীয়। নিঃসঙ্গ জীবন কাটে মোটা চশমা খুজে আর পত্রিকা পড়ে বা ধর্মীয় চর্চা করে। সবাই চালিয়ে দেয় ‘অচল জিনিস’ বলে।পশ্চমিারা ব্যক্তি জীবনে সৎ ও পরোপকারী হন। চলার পথে কারও কাছে যে কোন ধরনের সহয়তা চাইলে সাধ্য মত চষ্টা করেন। বৃদ্ধ বয়সে প্রচুর চেরিটি করেন বা দান করেন। আামাদের দেশে যে বয়সে সম্পদ আঁকড়িয়ে ধরার প্রবনাতা লক্ষণীয়,পচ্চিমা বিশ্বে তার বিপরিত। পচ্ছিমা বিশ্বে দুর্নীতি হয় না সেটা বলা যাবে না,তবে আামাদের দেশের মত সাধারন মানুশকে জিম্মি করে না। আমাদের দেশে যেখানে বিভিন্ন অকেসন/ সিজন/উৎসব কে সামনে রেখে জিনিস পত্রের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা করা হয়। পচ্চিমা বিশ্বে বিভিন্ন অকেসন / সিজন/ উৎসব কে সামনে রেখে জিনিস পত্রের দাম কমার প্রতিযোগিতা হয়। আামাদের দেশে ব্যবসা ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের প্ররতানার আশ্রয় নেয়া হয়। ক্রেতা সেবা না ই বললে চলে। পচ্চিমারা কিন্তু এখনও এ ধরনের অভিযোগ থেকে মুক্ত। পচ্ছিমা বিশ্বের মানুষ সহজে মিথ্যা বলে না, প্রতারণা করে না, খাবারে বেজাল মিশায় না, সম্পদ নিয়ে ভাই বোনের সাথে দন্দে জড়ায় না। উপকার পেলে যেকোন ভাবে প্রত্যুপকারের চেষ্টা করে। আমাদের দেশে ট্যাক্সি/ সি এন জি র কথাই ধরেন। ৮০ টাকার ভাড়া ৩০০ – ৪০০ টাকার নিচে যাবে না। এ রকম অনিয়ম করে সবাই পার পেয়ে যাচ্ছে। পচ্চিমা বিশ্বে এক ডলার বেশী দাবী করলে আর তা প্রমাণ করতে পারলে রাস্তায় আর সে কখন ও গাড়ী চালাতে পারত না। কয়েক দিন আগে টাকার অভাবে হাঁসপাতালে জায়গা না পেয়ে এক মা রাস্তায় সন্তান প্রসব করেন। পশ্চিমা বিশ্বে এ রকম ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আইনের কাঠ গড়ায় দাঁড়াতে হত। আমাদের দেশে পত্রিকার রিপোর্ট পর্যন্ত সারা। দোষীদের কিছু ই হয় না বা হবে ও না। বিশ্বজিতের হত্যার দৃশ্য সারা দুনিয়া প্রত্যক্ষ করেছিলো। কয়েক দিন আগে খবরে দেখলাম, তাদের কয়েক জনকে জেল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আলোচনার টেবিলে আক্ষেপ করে সে দিন এক জন বলেই ফেললো,“ এ দেশ আমার মত সাধারণের জন্য নয়, এ দেশ কিছু অসাধারন মানুশের জন্য, আমরা কখন ও তাদের মত অসাধারন হতে পারব না”। পশ্চিমারা কখন ও নিজের দেশের সম্পদ চুরি করে অন্য দেশে সম্পদের পাহাড় গড়েন না। পচ্চিমাদেরকে যত খারাপ বলেন না কেন এদের দানের টাকার ২৫% ও যদি সঠিক ব্যবহার হত তা হলে আমাদের দেশে কোন মানুষই চরম দরিদ্র সীমার নিচে থাকত না। একটা মেয়ে শর্ট ড্রেস পরে সারা রাত একা ঘুরে বেড়ালে বা পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ঘুরে বেড়ালে ও কেউ কুদৃষ্টিতে তাকাতে সাহস করে না।
জীবনযাত্রার মান ও নাগরিক সুবিধার কারণে বসবাসের জন্য এখনো পশ্চিমা দুনিয়ার শহর গুলো ই প্রাধান্য পাচ্ছে। আমাদের দেশের অনেকে পচ্চিমা দুনিয়ায় আছেন যারা দেশে এখানকার চেয়ে দ্বিগুণ বা তিন গুণের বেশী আয় করতে পারতেন। নাগরিক সুবিধার কারণে পচ্চিমা দুনিয়ায় পরে আছেন। জরুরী সাহায্যের জন্য কল করলে ৩-৫ মিনিটের মধ্যে সেবা নিচ্চিত করা হয়।
আলোর সাথে অন্ধকার যেমন সম্পর্কিত । তেমনি ভাল খারাপ নিয়ে ই পৃথিবী।তবে ‘গ্র্যান্ড টোটাল’ বলে একটা কথা আছে। সে বিবেচনায় পচ্ছিমারা আমাদের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে।
ইট ভাটাতে ইট তৈরি হয় কিন্তু এর ব্যবহারের উপরের নির্ভর করে এর মুল্য। একই ইট ভাটার দুটি ইট কোনটা লাগানো হয় মসজিদ, মন্দির বা চার্চের ফ্লোরে আবার কোনটা লাগানো হয় টয়লেটের ফ্লোরে। পচ্চিমা দুনিয়া নিয়ে অনেকে বিরধীতা করলেও মন কিন্তু ঠিকই বলে, “থাকুম না ভাই থাকুম না এই দেশেতে থাকুম না। বেইচা দিমু জমি জিরাত, বেইচা দিমু ঘর। তোরা যেমনে পারস তেমন কইরা ভিসা জোগাড় কর”।জোগাড় করে ফেলতে পারলে তো ভাল, না হলে লেগে থাকুন। সফল হতে পারেন।

 লেখক,
নুরুজ্জামান বিশ্বাস,
টরেন্টো, কানাডা। 

user
user
Ad
Ad