`

আশুরা কি এবং কেন ?

  • Views: 4361
  • Share:
আগষ্ট ৮, ২০২১ ১১:৩৩ Asia/Dhaka

এইচ এম ফখরুল ইসলাম সিদ্দিকী:: হিজরী সনের প্রথম মাস মুহাররম। কুরআনে বর্ণিত চারটি সম্মানিত মাসের প্রথম মাস মহররম, যাকে আরবের অন্ধকার যুগেও বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার চোখে দেখা হতো। শরীআতের দৃষ্টিতে যেমন এ মাসটি অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। হাদিসে এ মাসকে শাহরুল্লাহ বা আল্লাহর মাস বলে অভিহিত করা হয়েছে। এই মাসে সংঘটিত ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণ অনেক দীর্ঘ। আমরা দেখতে পাই, ইতিহাসের এক জ্বলন্ত সাক্ষী এই মহররম মাস। ইসলামের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সূত্রপাত হয় এ মাসে। শুধু উম্মতে মুহাম্মদীই নয়, বরং পূর্ববর্তী অনেক উম্মত ও নবীদের অবিস্মরণীয় ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল এই মাসে।

মহররম অর্থ মর্যাদাপূর্ণ, তাৎপর্যপূর্ণ। যেহেতু অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য ও রহস্যময় তাৎপর্য নিহিত রয়েছে এ মাসকে ঘিরে, সঙ্গে সঙ্গে এ মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ছিল, এসব কারণেই এ মাসটি মর্যাদাপূর্ণ। তাই এ মাসের নামকরণ করা হয়েছে মহররম বা মর্যাদাপূর্ণ মাস।

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে-
اِنَّ عِدَّۃَ الشُّہُوۡرِ عِنۡدَ اللّٰہِ اثۡنَا عَشَرَ شَہۡرًا فِیۡ  کِتٰبِ اللّٰہِ یَوۡمَ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ مِنۡہَاۤ  اَرۡبَعَۃٌ  حُرُمٌ ؕ ذٰلِکَ الدِّیۡنُ الۡقَیِّمُ ۬ۙ  فَلَا تَظۡلِمُوۡا فِیۡہِنَّ اَنۡفُسَکُمۡ وَ قَاتِلُوا الۡمُشۡرِکِیۡنَ کَآفَّۃً کَمَا یُقَاتِلُوۡنَکُمۡ کَآفَّۃً ؕ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ  اللّٰہَ  مَعَ الۡمُتَّقِیۡنَ ﴿۳۶﴾ 

অর্থাৎ-নিশ্চয় মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বার মাস, আল্লাহর কিতাবে (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজদের উপর কোন যুলম করো না, আর তোমরা সকলে মুশরিকদের সাথে লড়াই কর যেমনিভাবে তারা সকলে তোমাদের সাথে লড়াই করে, আর জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন।
(সুরা তাওবা-৩৬)

হাদীস রয়েছে। যেমন -
عَنْ أَبِي بَكْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ الزَّمَانُ قَدْ اسْتَدَارَ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ خَلَقَ اللهُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ثَلاَثٌ مُتَوَالِيَاتٌ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحَجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَانَ 

অর্থাৎ-আবূ বকরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নাবী (সঃ) বলেছেন- আল্লাহ্ আসমান ও যমীনকে যেদিন সৃষ্টি করেছিলেন, সেদিনের অবস্থায় যামানা আবার ফিরে এসেছে। বার মাসে এক বছর হয়। তার মধ্যে চারটি মাস মর্যাদাসম্পন্ন। যুলকাদা, যুলহাজ্জা ও মুহাররম এ তিন মাস এক নাগাড়ে আসে। আর মুযার গোত্রের রজব মাস যা জুমাদা ও শা’বান মাসের মধ্যে।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ), হাদিস নম্বরঃ ৭৪৪৭, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৯২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৩৯, হাদিসের মানঃ সহিহ)

আশুরাঃ
ইসলামে কিছু পর্ব বা দিবস আছে যে গুলো আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নির্ধারণ করেছেন ইবাদত, বন্দেগী বা নেক আমল করার জন্য, এমনি একটা দিবসের নাম আশুরা। হিজরী সনের প্রথম মাস মুহাররমের দশ তারিখ। মুসলিম উম্মাহর দ্বারে দ্বারে কড়া নাড়ে প্রতি বছর। এ মাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর হিজরত ও তার দাওয়াতী জিন্দেগী শুরু ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের কথা। এ মাসে রয়েছে এমন একটি দিন, যে দিনে দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে মহান আল্লাহ তায়ালা চিরকালের জন্য নবী মুসা (আঃ) ও তার অনুসারী ঈমানদারদেরকে ফেরাউনের জুলুম থেকে নাজাত দিয়েছিলেন এবং এই ফেরাউনকে তার বাহিনীসহ লোহিত সাগরে ডুবিয়ে মেরে শিক্ষা দিয়েছিলেন ভ্রান্ত খোদার দাবিদার ফেরাউন ও তার বিশাল বাহিনী ও বিশ্ববাসীকে। বিজয় হয়েছিল নবী মুসা (আঃ) এর। পতন হয়েছিল তখনকার সবচেয়ে শক্তিশালী জালেম সম্রাট ফেরাউন ও তার সম্রাজ্যের। সে দিনটিই হল আশুরা তথা মুহাররম মাসের দশ তারিখ।

এ ঘটনা ইমাম বুখারি তাঁর কিতাবে এভাবে বর্ণনা করেন-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم لَمَّا قَدِمَ الْمَدِينَةَ وَجَدَهُمْ يَصُومُونَ يَوْمًا، يَعْنِي عَاشُورَاءَ، فَقَالُوا هَذَا يَوْمٌ عَظِيمٌ، وَهْوَ يَوْمٌ نَجَّى اللَّهُ فِيهِ مُوسَى، وَأَغْرَقَ آلَ فِرْعَوْنَ، فَصَامَ مُوسَى شُكْرًا لِلَّهِ‏.‏ فَقَالَ ‏ "‏ أَنَا أَوْلَى بِمُوسَى مِنْهُمْ ‏"‏‏.‏ فَصَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ‏.‏

অর্থাৎ-ইব্‌নু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী‎ (সঃ) যখন মদীনায় আগমন করেন, তখন তিনি মদীনাবাসীকে এমনভাবে পেলেন যে, তারা একদিন সাওম পালন করে আর সে দিনটি হল ‘আশুরার দিন। তারা বলল, এটি একটি মহান দিবস। এটি এমন দিন যে দিনে আল্লাহ্‌ মূসা (আঃ) কে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরাউনের সম্প্রদায়কে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। অতঃপর মূসা (আঃ) শুকরিয়া হিসেবে এদিন সাওম পালন করেছেন। তখন নবী‎ (সঃ) বললেন, তাদের তুলনায় আমি হলাম মূসা (আঃ) এর অধিক নিকটবর্তী। কাজেই তিনি নিজেও এদিন সাওম পালন করেছেন এবং এদিন সাওম পালনের নির্দেশ দিয়েছেন।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৩৯৭, মুসলিম-১১৩৯, হাদিসের মান: সহিহ হাদিস)

উপরোক্ত হাদিসের আলোকে প্রধানত দুটি বিষয় প্রতিয়মান হয়-

প্রথমতঃ হজরত মুসা (আঃ) অভিশপ্ত ফেরাউনের কবল থেকে আশুরার দিন রক্ষা পেয়েছিলেন। যা হাদিসের প্রায় সব গ্রন্থেই পাওয়া যায়।
দ্বিতীয়তঃ আশুরার ঐতিহ্য আবহমানকাল থেকে চলে আসছে।

আবহমানকাল থেকে আশুরার দিনে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি হিজরি ৬১ সনে আশুরার দিন কারবালার ময়দানে সংঘটিত দুঃখজনক ঘটনাও মুসলিম জাতির জন্য অতিশয় হৃদয়বিদারক ও বেদনাদায়ক। প্রতিবছর আশুরা আমাদের এই দুঃখজনক ঘটনাকেও স্মরণ করিয়ে দেয়।

আশুরার রোজাঃ
মহররমের ১০ তারিখে রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। একটি হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়, রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা উম্মতে মুহাম্মদীর ওপর ফরজ ছিল। পরবর্তী সময়ে অবশ্যই ওই বিধান রহিত হয়ে যায় এবং তা নফলে পরিণত হয়।
হাদীস রয়েছে। যেমন-
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ - رضى الله عنه - قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَأْمُرُنَا بِصِيَامِ يَوْمِ عَاشُورَاءَ وَيَحُثُّنَا عَلَيْهِ وَيَتَعَاهَدُنَا عِنْدَهُ فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ لَمْ يَأْمُرْنَا وَلَمْ يَنْهَنَا وَلَمْ يَتَعَاهَدْنَا عِنْدَهُ 

অর্থাৎ- জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সঃ) আশূরার দিন আমাদেরকে সিয়াম পালনের নির্দেশ দিতেন। তিনি এ ব্যাপারে আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করতেন এবং এ বিষয়ে তিনি আমাদের খোজ-খবর নিতেন। কিন্তু যখন রমযানের সিয়াম ফরয হল তখন তিনি আমাদেরকে আদেশও করেননি, বাধাও দেনননি এবং কোন খোঁজ-খবর আর নেননি।
(সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী) হাদিস নম্বরঃ ২৫৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৫১৯, ইসলামীক সেন্টার ২৫১৮, হাদিসের মানঃ সহিহ)

হাদীসে আরো এসেছে-
أَنَّ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَمَرَ بِصِيَامِ يَوْمِ عَاشُورَاءَ، فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ كَانَ مَنْ شَاءَ صَامَ، وَمَنْ شَاءَ أَفْطَرَ‏.‏

অর্থাৎ- হযরত ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) প্রথমে ‘আশূরার দিনে সাওম পালনের নির্দেশ দিয়েছিলেন, পরে যখন রমযানের সাওম ফরয করা হল তখন যার ইচ্ছা আশূরার সাওম পালন করত আর যার ইচ্ছা করত না।
(সহীহ বুখারী (ইফাঃ) হাদিস নম্বরঃ ১৮৭৫, হাদিসের মানঃ সহিহ)

রসূলে কারীম (সাঃ) এ সওমকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে পালন করতেন।

যেমন হাদীসে এসেছে-
عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، أَنَّهُ سَمِعَ ابْنَ عَبَّاسٍ، وَسُئِلَ عَنْ صِيَامِ عَاشُورَاءَ، قَالَ: مَا عَلِمْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَامَ يَوْمًا يَتَحَرَّى فَضْلَهُ عَلَى الْأَيَّامِ، إِلَّا هَذَا الْيَوْمَ يَعْنِي شَهْرَ رَمَضَانَ، وَيَوْمَ عَاشُورَاءَ

অর্থাৎ- উবায়দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে যখন আশুরার সাওম সস্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তখন তিনি তাকে বলতে শুনেছেন যে নবী (সঃ) রমাদান মাসের ও আশুরার সাওম ব্যতীত অন্য কোন দিনের সাওম কে গুরত্ব দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই।
(সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৩৭০, হাদিসের মান: সহিহ হাদিস)

হাদীসে আরো এসেছে-
عَنْ حَفْصَةَ قَالَتْ أَرْبَعٌ لَمْ يَكُنْ يَدَعُهُنَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صِيَامَ عَاشُورَاءَ  وَالْعَشْرَ وَثَلَاثَةَ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الْغَدَاةِ 

অর্থাৎ- হযরত হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- চারটি আমল রাসুলুল্লাহ (সঃ) কখনো পরিত্যাগ করতেন না। (১) আশুরার দিনের সাওম, (২) যিলহজ্জ মাসের নয় দিনের সাওম, (৩) প্রত্যেক মাসে তিন দিনের সাওম এবং (৪) ফজরের দু' রাকাআত সুন্নাত।
(সূনান নাসাঈ (ইফাঃ) হাদিস নম্বরঃ ২৪১৮)

হাদীসে আরো এসেছে-
عَنْ أَبِي مُوسَى - رضى الله عنه - قَالَ كَانَ أَهْلُ خَيْبَرَ يَصُومُونَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ يَتَّخِذُونَهُ عِيدًا وَيُلْبِسُونَ نِسَاءَهُمْ فِيهِ حُلِيَّهُمْ وَشَارَتَهُمْ ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ فَصُومُوهُ أَنْتُمْ ‏"‏ ‏.‏ 

অর্থাৎ- আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- খায়বরের ইয়াহুদীরা আশূরার দিন সাওম পালন করত। তারা এ দিনকে ঈদরুপে পালন করত এবং তারা তাদের মহিলাদেরকে অলংকার ও উত্তম পোশাকে সুসজ্জিত করত। এরপর রাসুলুল্লাহ (সঃ) বললেন, তোমরাও এদিনে সাওম পালন কর।
(সহীহ মুসলিম (ইফাঃ) হাদিস নম্বরঃ ২৫৩২, হাদিসের মানঃ সহিহ)

উপরোক্ত হাদিস সমুহের আলোকে আশুরার রোজার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতীয়মান হয়। এমনকি তৎকালীন সময়ে তা ফরয ছিল। বর্তমানে এই রোজা যদিও নফল, কিন্তু অন্যান্য নফল রোজার তুলনায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

আশুরার রোজার ফজিলতঃ
রাসুলুল্লাহ (সঃ) এই রোজা নিজে পালন করেছেন এবং উম্মতকে তা পালনের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। তাই এর পূর্ণ অনুসরণ ও আনুগত্যের মধ্যেই নিহিত রয়েছে উম্মতের কল্যাণ। এ ছাড়া অসংখ্য হাদিসে আশুরার রোজার ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।

এ বিষয়ে কয়েকটি হাদিস নিন্মে উপস্থাপন করা হলো-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَانَ شَهْرُ اللَّهِ الْمُحَرَّمُ، وَأَفْضَلُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ صَلَاةُ اللَّيْلِ

অর্থাৎ- আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেন, রমযান মাসের পর সর্বোত্তম সাওম হল মুহররম মাসের সাওম এবং ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাত্রের সালাত।
(সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ১৬১৩, হাদিসের মান: সহিহ হাদিস)

হাদীসে আরো এসেছে-
عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الأَنْصَارِيِّ - رضي الله عنه - أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم - وَسُئِلَ عَنْ صِيَامِ يَوْمِ عَاشُورَاءَ، فَقَالَ: يُكَفِّرُ السَّنَةَ المَاضِيَةَ 

অর্থাৎ- আবূ কাতাদাহ আল্ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ (সঃ) আশুরাহর দিনের সওম পালন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হয়ে বললেন বিগত এক বছরের পাপ মোচন হয়।
(মুসলিম ১১৬২, তিরমিযী ৬৭৬, নাসায়ী ২৩৮২, আবু দাউদ ২৪২৫, ইবনু মাজাহ ১৭১৩, আহমাদ ২২০২৪, হাদিসের মান: সহিহ হাদিস)

ইমাম বায়হাকী (রঃ) বলেন, এ হাদীসের ব্যাখ্যা হলো- যে সওম পালনকারীর গুনাহ রয়েছে তার গুনাহের কাফফারা হবে আর যার গুনাহ নেই আশুরার সওম তার মর্যাদা বৃদ্ধি করবে।
(ফাযায়েলুল আওকাত: বায়হাকী)

আশুরার রোজা ও ইহুদি সম্প্রদায়ঃ
যে সকল বিষয়ে কোন শরয়ী হুকুম অবতীর্ণ হয়নি মদীনায় আসার পর সে সকল বিষয়ে নবী কারীম (সাঃ) ইহুদীদের অনুরূপ আমল করা পছন্দ করতেন। যেমন তিনি মসজিদুল আকসাকে কিবলা হিসেবে গ্রহণ করলেন। উদ্দেশ্য ছিল ইহুদীরা যেন ইসলামকে নিজেদের ধর্মের মতই মনে করে, ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে। পরে যখন সত্য ধর্ম ইসলাম গ্রহণের পরিবর্তে ইহুদীদের অবাধ্যতা, হিংসা, কপটতা, বিশ্বাসঘাতকতা, বর্ণবাদী নীতি ও চরম সাম্প্রদায়িকতা প্রকাশ পেল তখন সকল ব্যাপারে তাদের বিরোধীতা করার নির্দেশ দেয়া হল এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ব্যাপারে তাদের সাথে সাদৃশ্যতাপূর্ণ সকল আমল ও আচরণ করতে নিষেধ করা হল। তাই রসূলুল্লাহ (সাঃ) সংকল্প করলেন আশুরার দিনে তিনি ইহুদীদের মত আর একটি করে সওম পালন করবেন না। বরং এ সওমের সাথে মুহাররম মাসের নবম তারিখে একটি সওম বাড়িয়ে রাখার মাধ্যমে ইহুদীদের ধর্ম ও সাংস্কৃতির বিরোধীতা করবেন।

এর প্রমাণ হিসেবে হাদীস এসেছে-
 عَبْدَ اللَّهِ، بْنَ عَبَّاسٍ - رضى الله عنهما - يَقُولُ حِينَ صَامَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ - إِنْ شَاءَ اللَّهُ - صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم 

অর্থাৎ- আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সঃ) যখন আশূরারদিন সিয়াম পালন করেন এবং লোকদেরকে সাওম পালনের নির্দেশ দেন, তখন সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়াহুদী এবং নাসারা এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ (সঃ) বললেন, ইনশাআল্লাহ আগামী বছর আমরা নবম তারিখেও সাওম পালন করব। বর্ণনাকারী বলেন, এখনো আগামী বছর আসেনি, এমতাবস্থায় রসূলুল্লাহ (সঃ) এর ওফাত সংঘটিত হয়ে যায়।
(সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী), হাদিস নম্বরঃ ২৫৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৫৩৩, ইসলামীক সেন্টার ২৫৩২, হাদিসের মানঃ সহিহ)

এ হাদীস থেকে প্রতিয়মান হয় যে “রসূলুল্লাহ (সঃ) আশুরার সাওম মুহাররম মাসের দশ তারিখের পরিবর্তে শুধু মাত্র নবম তারিখে পালনের সংকল্প করেন” এ কথা বুঝে নেয়ার কোন অবকাশ নেই। বরং তিনি নবম ও দশম দু’দিন সওম পালন করার সংকল্প করেছিলেন। কেননা আশুরা হল দশম তারিখ, সে দিনকে বাদ দিয়ে সওম পালন করলে তা আশুরার সওম বলে গণ্য হবেনা।

আশুরা সম্পর্কে প্রচলিত আকীদাহঃ
অনেকেই আশুরার ঐতিহ্য বলতে রাসুল (সাঃ)-এর প্রিয়তম দৌহিত্র, জান্নাতি যুবকদের দলপতি ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর শাহাদাত ও নবী পরিবারের কয়েকজন সম্মানিত সদস্যের শাহাদাতের রক্তে রঞ্জিত কারবালার ইতিহাসকেই বুঝে থাকেন। তাদের অবস্থা ও কার্যাদি অবলোকন করে মনে হয়, কারবালার ইতিহাসকে ঘিরেই আশুরার সব ঐতিহ্য, এতেই রয়েছে আশুরার সব রহস্য। উপরোল্লিখিত হাদিসের আলোকে প্রতীয়মান হয়, আসলে বাস্তবতা কিন্তু এর সম্পূর্ণ বিপরীত। বরং আশুরার ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে প্রাচীনকাল থেকেই। ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর মর্মান্তিক শাহাদাতের ঘটনার অনেক আগ থেকেই আশুরা অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ও রহস্যঘেরা দিন। কারণ কারবালার যুদ্ধ সংঘটিত হয় ৬১ হিজরির ১০ মহররম। আর আশুরার রোজার প্রচলন ঘটেছে ইসলাম আবির্ভাবেরও বহুকাল আগ থেকে। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে আবহমানকাল থেকে আশুরার দিনে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি হিজরি ৬১ সনে আশুরার দিন কারবালার ময়দানের দুঃখজনক ঘটনাও মুসলিম জাতির জন্য অতিশয় হৃদয়বিদারক ও বেদনাদায়ক। 

প্রতিবছর আশুরা আমাদের এই দুঃখজনক এ ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তবে এও বাস্তব যে এ ঘটনাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে না পেরে আজ অনেকেই কুসংস্কারের অন্ধকারে নিমজ্জিত। যারা কারবালার মর্মান্তিক ঘটনাকে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে স্মরণ করে থাকেন, তারা কোনো দিনও চিন্তা করেছেন যে কী কারণে হজরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) কারবালার ময়দানে অকাতরে নিজের মূল্যবান জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন। সে দিকে আলোকপাত না করে অনেকেই মনে করেন যে জারি, মাতম, মর্সিয়া পালনের মধ্যেই কারবালার তাৎপর্য!

আফসোস! আফসোস! আমাদের কী করা উচিত! আর আমরা কী করছি? ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর উদ্দেশ্য ও আদর্শ আমাদের বাস্তব জীবনে অনুসরণ করাই হবে এ ঘটনার সঠিক মর্ম অনুধাবনের বহিঃপ্রকাশ। ইমাম হুসাইন (রাঃ) ও রাসুলে করিম (সাঃ)-এর প্রতি মুহব্বত ও আন্তরিকতার একমাত্র পরিচায়ক।

ইমাম হুসাইন (রাঃ)-এর শাহাদাৎঃ
হিজরী ৬০ সনে এজিদ বিন মুয়াবিয়া পিতার মৃত্যুর পর নিজেকে মুসলিম বিশ্বের খলিফা হিসাবে ঘোষণা করে। সে প্রকৃত মুসলমান ছিল না, সে ছিল মোনাফেক। শাসক হিসাবে সে ছিল স্বৈরাচারী ও অত্যাচারী। ইমাম হুসাইন (রাঃ) এজিদের আনুগত্য করতে অস্বীকৃত হন এবং ইসলামের সংস্কারের লক্ষ্যে মদীনা ছেড়ে মক্কা চলে আসেন। মক্কা থেকে তিনি কুফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি কারবালার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এ সময় উমর ইবনে সাদ আবি ওক্কাসের নেতৃত্বে চার হাজার সৈন্য কারবালায় প্রবেশ করে। কয়েক ঘণ্টা পর শিমার ইবনে জিলজুশান মুরাদির নেতৃত্বে আরো বহু নতুন সৈন্য এসে তার সাথে যোগ দেয়। কারবালায় দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এই অসম যুদ্ধে ইমাম হুসাইন (রাঃ) তাঁর ৭২ জন সঙ্গীসহ শাহাদৎ বরণ করেন। শিমার ইবনে জিলজুশান মুরাদি নিজে ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর কণ্ঠদেশে ছুরি চালিয়ে তিনাকে হত্যা করে। সেই দিনটি ছিল হিজরী ৬১ সনের ১০ই মুহাররম।

কারবালার ঘটনার স্মরণে শোক ও মাতম করাঃ
ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর উচ্চ মর্যাদার ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে কারো দ্বিমত নেই। তিনি জ্ঞানী সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে অন্যতম। দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানে তিনি মুসলিমদের নেতা। জান্নাতী যুবকদের নেতা। ইবাদত-বন্দেগী, সাহসিকতা-বীরত্ব, বদান্যতায় তিনি খ্যাত। সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের সর্বকনিষ্ঠা আদরের দুলালী মা ফাতেমা (রাঃ) এর সন্তান। তার মর্মান্তিক শাহাদাতের ঘটনায় বিশ্বের সকল মুসলিম চরমভাবে ব্যথিত ও মর্মাহত।

সাইয়েদুনা হুসাইন (রাঃ) এর শাহাদাত ও এ জাতীয় মর্মান্তিক ঘটনা স্মরণের সময় আমাদের কর্তব্য হবে ধৈর্য ধারণ করা, আল্লাহর ইচ্ছার প্রতি সন্তুষ্ট থাকা। বান্দার জন্য যা কল্যাণকর আল্লাহ তা সংঘটিত করে থাকেন। যারা তাঁর দ্বীনের জন্য কুরবানী পেশ করেন তাদের তিনি এর উত্তম প্রতিদান দিয়ে থাকেন।
ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর জন্য শোক প্রকাশ করতে যেয়ে শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা যা করেন যেমন-
মাতম করা, উচ্চস্বরে আহাজারী করা, বুক চাপরানো, পোষাক ছিড়ে ফেলা, শরীর রক্তাক্ত করা এ সমস্ত কাজগুলো ইসলাম সম্মত নয়।

প্রকৃত সত্য হলো এগুলো জাহেলী যুগের আচরণ। এ সমস্ত কাজ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে-
عَنْ عَبْدِ اللهِ مسعود رضى الله عنه عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَيْسَ مِنَّا مَنْ ضَرَبَ الْخُدُودَ وَشَقَّ الْجُيُوبَ وَدَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ 

অর্থাৎ- হযরত ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: যারা শোকে গন্ডে চপেটাঘাত করে, জামার বক্ষ ছিন্ন করে ও জাহিলী যুগের মত চিৎকার দেয়, তারা আমাদের দলভুক্ত নয়।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ), হাদিস নম্বরঃ ১২৯৭,আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২১৯)হাদিসের মানঃ সহিহ)

আশুরার দিনে আমাদের করণীয়ঃ
আল্লাহ ও তার রসূলকে মহব্বত করা ইসলামেরই নির্দেশ। রসূল (সঃ) কে সব কিছুর চেয়ে এমনকি নিজের জীবনের চেয়ে বেশী ভালবাসতে হবে। এমনিভাবে আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর আহলে বাইত (পরিবারবর্গ) কে মুহাব্বত ঈমানের দাবী। কিন্তু মহব্বত যেন সীমা ছাড়িয়ে না যায়। যাকে মহব্বত করা হবে তার আদেশ যেন লংঘিত না হয়।

অতএব, আশুরার সাথে সওম পালন ব্যতীত অন্য কোন আমলের সম্পর্ক নেই। এটাই হলো রসূলে কারীম (সাঃ) এর প্রদর্শিত পথ ও তার আদর্শ। এ ছাড়া আশুরাকে কেন্দ্র করে যা কিছু করা হবে সবই বিদ'আত হিসেবে পরিগণিত হবে।

কারবালার ঐতিহাসিক ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর উদ্দেশ্য ও আদর্শ আমাদের বাস্তব জীবনে অনুসরণ করাই হবে এ ঘটনার সঠিক মর্ম অনুধাবনের বহিঃপ্রকাশ এবং ইমাম হুসাইন (রাঃ) ও রাসুলে করিম (সঃ) এর প্রতি মুহাব্বত ও আন্তরিকতার একমাত্র পরিচায়ক।

অসত্যের নিকট আত্মসমর্পণ না করে সত্যকে সমুন্নত রাখতে হবে। ইমলামের দৃষ্টিতে অন্যায়, জুলুম, নির্যাতন, অত্যাচার, হত্যা, মানবপাচার, সন্ত্রাসবাদ,জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে, ইমানের বলে বলিয়ান হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে। প্রতিরোধের প্রত্যয়ে মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآَخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا

অর্থাৎ- "তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতকে ভয় করে ও আল্লাহকে অধিক স্নরণ করে তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর রসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ।" (সূরা আহযাব : ২১)

রসূল (সঃ) তার উম্মতকে সর্বদা সতর্ক করে বলেছেন-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِيَّاكُمْ وَالْغُلُوَّ فِي الدِّينِ فَإِنَّمَا أَهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمُ الْغُلُوُّ فِي الدِّينِ ‏"‏ 

অর্থাৎ- ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু বলেনঃ দীনের বিষয়ে বাড়াবাড়ি করা থেকে তোমরা সাবধান থাকো। কেননা তোমাদের পূর্বেকার লোকেদেরকে দীনের ব্যাপারে তাদের বাড়াবাড়ি ধ্বংস করেছে।
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বরঃ ৩০২৯, নাসায়ী ৩০৫৯, আহমাদ ১৮৫৪, সহীহাহ ১২৮৩, যিলাল ৯৮। হাদিসের মানঃ সহিহ)

বর্ণিত হাদীসে 'আল-গুলু' বা 'বাড়াবাড়ি' করা মানে ধর্মে যা নেই তা ধর্ম হিসেবে পালন করা বা ধর্মের বিধান পালনে সীমা লংঘন করা। অথবা ধর্মীয় আমলের সাথে কিছু সংযোজন করা। ইহুদী খৃষ্টানেরা এ রকম বাড়াবাড়ি করেই নিজেদের ধর্মকে ধ্বংশ করেছে।

সার কথাঃ
* আশুরা একটি গুরত্বপূর্ণ ইসলামী পর্ব।
* আশুরাতে সওম পালন করা সুন্নাত।
* আশুরার সওম দুদিন পালন করা উচিত। মুহাররম মাসের নবম ও দশম তারিখে। যদি নবম তারিখে সওম পালন সম্ভব না হয় তবে দশম ও একাদশ তারিখে সওম পালন করবে। মনে রাখতে হবে নবম ও দশম তারিখে দুটো সওম পালন করা উত্তম।
* আশুরার জন্য শরীয়ত অনুমোদিত বিশেষ আমল হল এই সওম পালন। এ ছাড়া আশুরার অন্য কোন আমল নেই।
* কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার সাথে আশুরার কোন সম্পর্ক নেই। আশুরার মর্যাদা বৃদ্ধিতে বা কমাতে এর কোন ভূমিকা নেই।
* কারবালার ইতিহাস স্মরণে আশুরা পালনের নামে যে সকল মাতম, মর্সিয়া,তাযিয়া মিছিল, শরীর রক্তাক্ত করাসহ যা কিছু করা হয় এর সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। ইসলাম এ সকল কার্যকলাপের অনুমোদন দেয় না। এগুলো সন্দেহাতীত ভাবে বিদআত। এগুলো পরিহার করে চলা ও অন্যদের পরিহার করতে উৎসাহিত করা রসূলে কারীম (সঃ) সুন্নাহ অনুসারী সকল ঈমানদারের কর্তব্য।

পরিশেষে মহান আল্লাহ তাআলার কাছে এই কামনা করি “আল্লাহ আপনি আমাদের প্রত্যেককে আপনার দেওয়া বিধি-বিধান সমূহ যথাযথ অনুসরণ করার তাওফিক দান করুণ”। আমিন।

মাওঃ এইচ এম ফখরুল ইসলাম সিদ্দিকী
সিনিয়র শিক্ষক (ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা)
সাদিপুর অদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়
উপজেলা-ওসমানীনগর
জেলা-সিলেট।

সূত্রঃ- মহাগ্রন্থ পবিত্র আল্ কুরআন, হাদিস সাস্ত্রের বিভিন্ন গ্রন্থ ও ইসলামী স্কলারবৃন্দের বিভিন্ন লেখা/কলাম/প্রবন্ধ থেকে সংগ্রিহীত।

[বিঃদ্রঃ- সম্মানিত পাঠকবৃন্দের প্রতি আমার আবেদন- উপরোক্ত লেখায় কোন ভুল-ত্রুটি আপনার দৃষ্টিগোচর হলে অনুগ্রহপূর্বক সঠিক তথ্যসহ কমেন্ট করে আমাকে কৃতজ্ঞ করবেন। এবং লেখাটি শেয়ার করে অন্যকে জানার সুযোগ করেদিন। ইনশাআল্লাহ্ তাতে আপনিও সাদাকায়ে জারিয়া সাওয়াব লাভ করবেন।]

user
user
Ad
Ad