`

সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের কাণ্ডারী কবির খান

  • Views: 3759
  • Share:
মে ১৫, ২০২১ ১৭:৪২ Asia/Dhaka

মো. আতাউর রহমান:: মো. কবির খান একজন প্রতিভাধর সংগঠক, শিক্ষা স্তরের সৃজনশীলতার কারিগর ও শিক্ষাদরদী লোক। সিলেটের শিক্ষাঙ্গন মাঠে তিনি মহত্ব ও মমত্ববোধ কর্মের ছোঁয়ায় সমাদৃত। তিনি মূলত একজন সংস্কৃতিমনা উদ্যোমী লোক।

প্রারম্ভিক জীবন :
সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার ১১নং লাউতা ইউনিয়নের কালাইউরা গ্রামের সন্তান মো. কবির খান। তিনি ১৯৬৬ সালের ১লা জানুয়ারি এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মো. ফৈয়াজ খান ও মাতার নাম  আনোয়ারা বেগম। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনিই পরিবারের প্রথম সন্তান। স্বল্প বয়সে তাঁর দুই ভাই মারা যান। তিনি বর্তমানে জলঢুপ (কমলা বাড়ি) এলাকার বাসিন্দা। 

শিক্ষা জীবন:
মো. কবির খান এর লেখাপড়ায় হাতেখড়ি হয় জলঢুপ সরকারি প্রাইমারী স্কুলে। তিনি ১৯৭৪ সনে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি নিয়ে জলঢুপ হাই স্কুলে ভর্তি হন। একই স্কুল থেকে অধ্যয়ন করে ৮ম শ্রেণিতে জুনিয়র বৃত্তি নিয়ে ১৯৮০ সনে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৮২ সনে বিয়ানীবাজার মহাবিদ্যালয় থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ভর্তি হন সিলেট এম.সি কলেজে । এই কলেজ থেকেই ১৯৮৪ সনে তিনি বিএসসি গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসসি (গণিত) প্রিলিমিনারীতে ভর্তি হন। রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ায় পিতৃ আদেশে সময় ক্ষেপণ না করে ১৯৮৬ সনে চট্রগ্রাম টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড  প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৯৯ সনে এমএ ডিগ্রি ও ২০০৬ সালে উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএড ডিগ্রি অর্জন করেন ।

কর্ম জীবন :
মো. কবির খান গ্রাজুয়েশন শেষে ১৯৮৪ সনে জলঢুপ উচ্চ বিদ্যালয়ের সংকটকালে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মো. আজির উদ্দিনের অনুরোধে স্কুলের গণিত শিক্ষক অদ্বৈত কান্ত  দাস'র প্রশিক্ষণ পিরিয়ডে গণিত বিষয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৮৫ সনে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের চট্রগ্রাম পোস্টমাস্টার জেনারেল এর কার্যালয়ে সহকারী ডাক পরিদর্শক পদে যোগ দেন। সেখানে পাঁচ মাস চাকুরী করে পুনরায় অধ্যয়নে ফিরেন। ১৯৮৬ সালে বিএড পাশের পর তিনি বালাগঞ্জ থানা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পদে যোগ দেন। এখানেও মন বসেনি। দুই মাস পর এই পদ থেকেও ইস্তফা দিয়ে আবারও ১৯৮৭ সালে জলঢুপ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন। সাহিত্য সংস্কৃতিমনা শিক্ষক কবির খান'র সম্পাদনায় বিদ্যালয়ের প্রথম ম্যাগাজিন ‘মুকুর’ প্রকাশিত হয়। 

১৯৯১ সনের মে মাসে তিনি সিলেট সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। সেখান থেকে একই পদে ২০০৭ সনে সুনামগঞ্জের সরকারি জুবিলী  উচ্চ বিদ্যালয়ে ও ২০০৮ সনে জৈন্তাপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। এরপর ২০০৯ সনে সিলেটের সরকারী অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে যোগদান করেন। এই স্কুলে ২০১২ সনে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে ২০১৬ সন পর্যন্ত কর্মরত থাকাবস্থায় ২০১৭ সনে একই পদে সুনামগঞ্জের সরকারী জুবিলী  উচ্চ বিদ্যালয় বদলি হন। সেখান থেকে ২০১৭ সনের মার্চ মাসে সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৯ সনে একই স্কুলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হন। বর্তমানে সিলেট সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের কাণ্ডারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

অবদান:
মো. কবির খান একজন দক্ষ সংগঠক ও আলোকিত স্বজন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি প্রতিশ্রুতিশীল। তিনি  শিক্ষকতা জীবনে নিউজিল্যান্ড, লন্ডন ও ভারতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। এছাড়াও সরকারি উদ্যোগে থাইল্যান্ড, আবুধাবি, সৌদি আরব ভ্রমণ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।

তিনি শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবীদাওয়ার প্রশ্নে এক বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর। তিনি বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি সিলেট অঞ্চলের দু-দুবার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি এই সংগঠনের নির্বাচিত সভাপতি। পাশাপাশি তিনি নিজ এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে গঠিত হাজী নিমার আলী খান ও হাওয়ারুন নেছা শিক্ষা সেবা ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন।  

ব্যক্তিজীবন:
কবির খান একজন উদ্যোমী, পরিশ্রমী, দৃঢ় চিত্তের অধিকারী লোক। সংকটে কিভাবে খাপ খাইয়ে নিতে হয়, সেটা শিখেছেন তিনি বাস্তব জীবন থেকে। তিনি যখন নবম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত তখন তাঁর পিতা এক মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে  কারান্তরীণ হন। এ সময়টি ছিল তার জীবনের সবচেয়ে টার্ণিং পয়েন্ট। পরিবারের বড় সন্তানরা কঠিনতম সময়ে কিভাবে পরিজনদের নিয়ে হাল ধরতে হয়, কিভাবে দাঁড়াতে হয়, কিভাবে মানিয়ে নিতে হয়, সেই শিক্ষণ অবলীলায় শিখেছেন তখনকার সমাজব্যবস্থার ভাণ্ডার থেকে। তিনি উপলব্ধি করেছেন, জীবন ঐশ্বর্য দিয়ে মাপা যায় না;  জীবন চিনতে মহত্ব ও মমত্ববোধের প্রয়োজন হয়। চলনে-বলনে তিনি একজন সদালাপী ও পরোপকারী মনের মানুষ। তিনি বাস্তব স্বপ্নের অন্যতম এক ফেরিওয়ালা। তাঁর তারুণ্যসুলভ নির্মল হাসি যে কাউকে মুগ্ধ করবে। তিনি এক বিদুষী রমণী নিয়ে দাম্পত্যজীবন শুরু করেন। তিনি দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। তিনি শিক্ষার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যেমনটা অতন্দ্র প্রহরী, সংসার জীবনের কর্মকাণ্ডের তেমনি এক কাণ্ডারী। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের তাঁর সকল প্রয়াস মঙ্গলময় হোক, এ প্রত্যাশা রাখি।

লেখক: 
মাস্টার ট্রেইনার, শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট || পঞ্চখণ্ডের পথ ও পথিকৃৎ গ্রন্থের লেখক।

user
user
Ad
Ad